অস্তিত্বের লড়াইয়ে যেমন পরিবর্তন আমরা চাই- তৌহিদুল ইসলাম

অদ্ভূত এক সময়ের মধ্য দিয়ে চলছে পুরো পৃথিবী, সবাই দৌড়ে চলেছে। দৌড় দৌড় দৌড়! এ যেন নিজেকে প্রমান করার এক অদম্য খেলা। অথচ মানুষ হিসেবে কিসের প্রমান চাইছি তা নিয়ে নিজেকে কেউ কখনো প্রশ্ন করিনা। তারপরেও আমরা পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন চাই নিজের, সমাজের, আইনের শাসনের, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার।
পরিবর্তন শব্দটি বড়ই আপেক্ষিক। এক এক জনের কাছে এক এক রকম। আসলেই কি পরিবর্তন হচ্ছে নাকি পরিবর্তনের নামে পরিহাস? পরিবর্তন নাকি পরিহাস এটি বোঝার জন্য নিজের শিক্ষার বিকল্প নেই। তবে এই শিক্ষা কিন্তু শুধু পুঁথিগত বিদ্যার শিক্ষা নয়। এই শিক্ষা হলো মানবিক গুনাবলী বিকশিত করার শিক্ষা।
এ কারনেই পরিবর্তন শব্দটিকে যেভাবে বিশ্লেষন করা হয় সেইভাবে পরিবর্তন বোধহয় সহসাই আসবে না। এখন পরিবর্তন বলতে বুঝি কেবলই এক হাত থেকে অন্য হাতে ক্ষমতার হস্তান্তরকরন মাত্র। আমাদের বুঝতে হবে, শুধু বৃহত্তর মাত্রেই নয়; পরিবর্তন হতে হবে গোটা একটা সভ্যতার,পুরো মানব জাতির।
অথচ আজও প্রগতিশীলতার এই যুগে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটটা সেই একই রকম থেকে যাচ্ছে। কেন? কারন সবই মানুষের তৈরি করা নিয়ম-কানুন। এখানে পরিবর্তনটা শুধুই ওপরে ওপরে লোক দেখানো। অনেকটা জোর করে চাপিয়ে দেয়া কিছু নিয়ম মাত্র। এখানে নৈতিক শিক্ষা কোথায়?
সভ্যতার বিকাশে পরিবর্তন আসা দরকার ভাব জগতে, যেটা দেখা গিয়েছিল ১৭৮৯ সালের ফরাসী বিপ্লবের সময়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এটাই, মানুষ আজ সামান্য পরিবর্তনেই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। যদি প্রশ্ন করেন- কিসের উল্লাস, কার জন্য উল্লাস? দেখবেন সঠিক উত্তর কেউ জানেনা!
এর কারন, আমাদের মুল্যবোধ, ভাবাবেগ একটা কালো পর্দার আড়ালে চলে গিয়েছে। যা আছে তা শুধুই অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থন। আয়নায় নিজের উল্টো প্রতিচ্ছবি আর এই মিথ্যে আবেগের কাছে প্রতিনিয়ত মৃত্যু হচ্ছে আমাদের নব ভাবনার, নব চেতনার। আমরা ভুলে যাচ্ছি- সব পরাজয় যেমন পরাজয় নয়, সব জয়ও তেমনি প্রকৃত জয় নয়।
যদি বট গাছের গোড়ায় পানি দেয়া হয় তবে তা শেকড় থেকে কান্ডে, কান্ড থেকে পাতায় পাতায় পৌঁছে যাবে। ঠিক তেমনি এমন এক জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে যাতে সামগ্রিক ক্ষেত্রে সেই পরশ ছড়িয়ে পড়ে সভ্যতার আনাচে-কানাচে। আর সেটাই হল শিক্ষা, যথার্থ মুল্যবোধের শিক্ষা।
আসলে আমরা সব বুঝি, তবুও লক্ষিন্দরের ঘরে ছিদ্র থেকেই যায়। এই ছিদ্র আমরাই তৈরি করি! একদিকে খড়কুটোর মতে ভেসে যাচ্ছে জীবনের সব সৃষ্টি, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে পরিনত হচ্ছে হাহাকারে। অন্যদিকে কোন এক নিভৃত্ব কোণে সৃষ্টিকর্তা মুচকি মুচকি হেসে বলেন- আজ কি দিবস বত্স? জানিসতো, আমি চাইলেই সব দুমড়ে-মুচড়ে একটা কাদার মন্ডে পরিবর্তন করতে পারি!
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সবাই পরিবর্তন চায়। কেউ ভাঙ্গে, কেউ গড়ে। ভাঙা-গড়ার এটাইতো নিয়ম। এই নিয়ম করায়ত্ব করতে মানবিক শিক্ষার বিকল্প আর কিছুই নেই। আমরা হয়তো পারিনি, কিন্তু সভ্যতার অস্তিত্বের লড়াইয়ে কোন একটি প্রজন্ম একদিন সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অবশ্যই প্রকৃত পরিবর্তন আনবে। সেদিন জয় হবে নৈতিকতার, জয় হবে মুল্যবোধের।
(লেখক -গণমাধ্যমকর্মী ও কলাম লেখক )