আমাদের গুলি করে মারার দরকার কি?বনি আলমের পরিবার

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার, ২৬ নভেম্বর।। আমাদের গুলি করে মারার দরকার কি? কুপানোর দরকার কি? নামভাঙ্গানো উচ্চপদস্থ মানুষগুলোর কেউ একজন বল্লেই তো আমরা জায়গা, বাড়ি ছেড়ে চলে যেতাম।
ন্যায় বিচার না পেলে আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক ইনানীতে নৌবাহিনীর জেটি
উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
উদ্বোধন হতে যাওয়া জেটির পাশে স্ব পরিবার সাগরে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি দেব।
২৬ নভেম্বর শনিবার বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গুমরে কেঁদে কেঁদে এমনটাই বললেন নির্যাতিত বনি আলম ও তার পরিবার।
ডাকাতি মামলায় ডাকাতদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন ভূমিকা না থাকায় ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনায় সংবাদ সম্মেলন করেন এই পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ইনানী রয়েল টিউলিবের পাশে মেরিন ড্রাইভের কাছে একখন্ড জমি আছে বনি আলমের। সেখানে তিনি দোকান/রেস্টুরেন্ট, বাড়ি, পুকুর গড়ে ছিলেন। সেগুলো এখন নিচিহ্ন। ডাকাতরা গত ২ নভেম্বর তার বাড়ী এবং দোকান ডাকাতি করাকালে মুর্মুহু গুলি ও পরিবারের লোকজনদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে।
কিন্তু ঘটনাস্থলের ১০০/২০০ গজ দূরত্বে পুলিশ ফাড়িতে ফোন দেন, থানায় ফোন দেন, ৯৯৯ এ ফোন দেন। কিন্তু সকলে সময় ক্ষেপন করে। এক সময় ডাকাতরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়, গুলিবৃদ্ধ হয় বনি আলমের স্ত্রী ফরিদা, শাহিনা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিফা, মেয়ে সহ বাড়ীর সবাই।
পাড়া প্রতিবেশীরা আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়, নির্মমতা এমন ছিল যে, বাড়ীতে থাকা আমার নাতী এর বছরের শিশু আবাবিল পর্যন্ত গুরুতর আহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বনি আলম জানান, ঘটনার পর আমি থানায় মামলা রেকর্ড করাতে ব্যর্থ হয়েছি।পরে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত ৬/৭ জন্য ভিকটিমকে দেখে মামলাটি এজাহার নেওয়ার জন্য উখিয়া থানার ওসিকে আদেশ দেন। যথারীতি গত ৬ নভেম্বর মামলাটি অফিসার ইনচার্জ উখিয়ার টেবিলে যাওয়ার পর তিনি মামলাটি রেকর্ড না করে ফেলে রাখেন। এমনকি যিনি অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছেন সেই ১নং আসামী তৈয়বকে ডেকে এনে কিছু জাল প্রেসক্রিফশন দিয়ে উল্টো গুলিবিদ্ধ ও আহতদের বিরুদ্ধে গত ৮ নভেম্বর একটি মামলা রুজু করেন। এবং পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা দেয়া মামলাটিও রুজু করলেন। হামলাকারীদের দায়েরকৃত মামলা নং-জিআর-১৩৯১/২০২২ (উখিয়া) এবং আহতদের দায়েরকৃত মামলা নং-জিআর-১৩৯২/২০২২ (উখিয়া)।
আহত বনি আলম প্রশ্ন তুলে বলেন, একটি ডাকাতির মামলার এজাহারভুক্ত ১নং আসামী উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের সামনে যায় কেমনে? এজাহারভুক্ত আসামী থানায় গিয়ে মামলা করে কেমনে?
হামলায় আহতদেরকেও মামলায় আসামী করা হয়।
বনি আলমের অভিযোগ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাউসার হামিদকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেন। যাতে আসামীদের কোন ক্ষতি না হয়। ইতোমধ্যে আহতরা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তরা বাড়ী, রেস্টুরেন্ট, দোকান, পুকুর লুট করে অস্বিত্ব পর্যন্ত রাখেনি। অন্যদিকে, র্যাব সদস্যরা তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় দিলে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই মামলার আসামী মোজাম্মেল নিজেকে জালিয়াতির মাধ্যমে মেম্বার পরিচয় দিয়ে জামিনে বেরিয়ে যান। অথচ সে এখন মেম্বারও না, তার ওয়ার্ডে বর্তমানে মেম্বার জাহিদ আলম।
গুরুতর আহতদের শরীর থেকে গুলি বের হওয়ায় আগেই আসামী জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।
অপর দুইজন আসামী তৈয়ব এবং বার্মাইয়া আমিনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ডাকাতি ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার, ডাকাতির রহস্য উদঘাটন আসামীদের ৭ দিন রিমান্ডের আবেদন করে। কিন্ত আবেদনের নথি নিয়ে চলে নয়ছয়। যাতে রিমান্ডের আবেদন জেলা জজের কাছে না যায় বা চোখে না পড়ে। অথচ যেই কাগজেই আসুক সেটি নথিতে যাওয়ার কথা, ২১ নভেম্বর আবেদন, ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত নথিতে না যাওয়া থেকে বুঝা যায় আসামীরা কতটা শক্তিশালী। ইতোমধ্যে জামিনে যাওয়া আসামী প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে ঘটনাস্থলে।
আসামীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে যে, তারা আমার বসত ভিটায় ডাকাতি করেছে। এই জায়গা দখল করে বিক্রি করে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বনি আলমের স্ত্রী ফরিদা বেগম, মেয়ে শাহেনা আকতার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিপা, ছেলে মহি উদ্দিন, জামাতা জাফর উল্লাহ, কাউছার ও রাসেল উপস্থিত ছিলেন।