ইসলামে খেলাধুলা ও সাংবাদিকতা

ইসলামে খেলাধুলা ও সাংবাদিকতা
ছবি সংগৃহিত

ইসলাম সত্য ও ন্যায়ের জীবন যাপনের পাশাপাশি বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ দেয়। বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। সুস্থ শরীর ও সুন্দর মন পরস্পর পরিপূরক। তাই ইসলাম এ বিষয়টির প্রতিও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

এছাড়াও ইসলাম নিথর-নির্জীব জীবনবোধের বদলে ইবাদতের মাধুর্যে শরীর-স্বাস্থ্যের বিকাশকে উৎসাহ দেয়। খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক বিষয়াবলীকে ইসলাম ধর্মে খুব সর্তকতার সঙ্গে মূল্যায়ণ করা হয়েছে। খেলা যখন খেলায় এবং বিনোদন যখন বিনোদনে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন ইসলাম এমন খেলা ও বিনোদনে বাধা দেয় না।

কারণ খেলাধুলা পৃথিবীর আদিকাল থেকে শিশু-কিশোরদের মজ্জাগত স্বভাব ছিল ও আছে। এটা সর্বজন স্বীকৃত একটি বিষয়। কিন্তু যখন এটাকে ব্যবসায়িক রূপ দেয়া হয়, যুবক-যুবতীরা খেলার নামে অশ্লীলতা ছড়ায় আর কিছু মানুষ এতে আসক্ত হয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করে তখন তাতে নিষেধাজ্ঞা চলে আসে। বর্তমান আলোচনায় আমরা তুলে ধরবো কোন কোন ক্ষেত্রে খেলাধুলার বৈধতা রয়েছে আর কোন কোন ক্ষেত্রে হারাম ঘোষণা করেছে।

হাদীসের আলোকে খেলাধুলা: স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণ নৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ কিংবা উটের প্রতিযোগিতা ব্যতীত (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই।’ (তিরমিজি: ৫৬৪)

তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম: ৭৬৬৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, নবীজী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা।’ (ফিকহুস সুন্নাহ, ২য় খ. পৃ ৬০)

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দুইটির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল।’ (বুখারি: ৩৬৫৭)

অন্যত্র বর্ণিত আছে, হজরত আলি (রা.) এর দৌড়ের গতি ছিল খুব বেশি। তাই তো দেহ মনের আনন্দের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে হজরত আলি (রা.) বলতেন, ‘অন্তরকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবকাশ ও শান্তি দান কর। কেননা, অন্তরের অস্বস্তি অন্তরকে অন্ধ করে ফেলে।’

পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘মানুষের মধ্যে এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা খেলাধুলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি।’(সূরা: লোকমানের, আয়াত: ৬) আলোচ্য আয়াতটি খেলাধুলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য। (রুহুল মাআনি: ৫৬৪৪)

বিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী (র.) তার ‘আহকামুল কোরআনে’ বর্ণিত আয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে বলেন, পবিত্র ককোরআনের এ আয়াতে ঐসকল কথা, কাজ, বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহ তায়ালার এবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধুলা কিংবা ক্রিড়া-কৌতুক-সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

খেলাধুলায় জায়েজ না নাজাজের শর্ত: ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো খেলাধুলাকে জায়েজ বা নাজায়েজ বলে নাই; বরং তিনটি শর্তের সঙ্গে জায়েজ-নাজায়েজের সম্পর্ক। তা হলো, () শারীরিক উপকার সাধন () ইসলামি শরিয়াতের কোনো বিধান লঙ্ঘন না হওয়া () আর্থিক ক্ষতিসাধন না হওয়া। এ তিনটি শর্ত যে খেলার মাঝে পাওয়া যাবে তা জায়েজ, আর পাওয়া না গেলে জায়েজ নয়।

যেসব শর্তে খেলাধুলা জায়েজ: এর ওপর ভিত্তি করে ইসলামি ফকিহরা আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ফাতোয়া তুলে ধরেছেন। যেকোনো ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হওয়ার জন্য তাতে নিম্নোক্ত শর্তগুলো উপস্থিত থাকতে হবে-

() ধর্মীয় জরুরি কর্তব্য পালন থেকে উদাসীন না করা: কোনো খেলা বৈধ হতে হলে তার মধ্যে এ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে যে তার নেশার ঘোর যেন মহান আল্লাহর কোনো ফরজ বিধান পালনের কথা দিব্যি ভুলিয়ে না দেয়। খেলার ছলে যেন ফরজ ছুটে না যায়। যেমন কোনো ফরজ নামাজের সময় খেলাধুলা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনর্থক কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ (সূরা: লুকমান, আয়াত: ৬) এ আয়াত দ্বারা কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যে, অতিরিক্ত খেলাধুলাও মানুষকে আল্লাহর পথ বা বিধান পালন থেকে বিরত রাখে।

() শরিয়তের মহৎ লক্ষ্যের প্রতি খেয়াল রাখা: মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীমাত্রেই জানেন, পৃথিবীতে আমাদের আগমন অহেতুক নয়। পৃথিবীতে আমাদের জীবন লক্ষ্যহীন নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,‘আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা: আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)

() সতর আবৃত থাকা এবং যৌন সুড়সুড়িদায়ক না হওয়া: অন্য সময়ের মতো খেলাধুলার সময়ও সতর ঢাকা ওয়াজিব। অথচ অনেক খেলায় ফিতনা উসকে দেবার মতো সতর খোলা থাকে। যেমন ফুটবল খেলায় পুরুষের উরুর অর্ধেক বা তারও বেশি অংশ খোলা থাকে। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি নিজের উরুকে উম্মুক্ত করো না এবং কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির উরুর দিকে দৃষ্টি দিও না।’ (আবূ দাউদ: ৪০১৭; শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সহীহুল জামে: ৭৪৪১)

 () জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়া: খেলাটি এমন হতে হবে যাতে জীবন নাশের নিশ্চিত বা প্রবল সম্ভাবনা না থাকে। কেননা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা বা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা: আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

 () হারাম উপার্জনমুক্ত হওয়া: খেলা বৈধ হবার আরেক মৌলিক শর্ত হলো, সেটি যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজিমুক্ত হওয়া। খেলাধুলার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজির অর্থ বৈধ উপার্জন নয়। আজকাল আন্তর্জাতিক খেলাধুলায় বাজি এবং বাজিকে কেন্দ্র করে নানা অনভিপ্রেত ঘটনার উদ্ভব প্রায়ই ঘটতে যায়। ইসলাম এসব অবৈধ উপার্জন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বদাই বদ্ধপরিকর। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সূরা: আল-মায়িদা, আয়াত: ৯০-৯১)

 () প্রতিযোগিতার জয়-পরাজয়ে শত্রুতা-মিত্রতা সৃষ্টি না হওয়া: খেলাধুলাকে শত্রুতা-মিত্রতার মাপকাঠি বানালে সে খেলাটি তার স্বাভাবিক বৈধতা হারায়। ভালো খেলার কারণে অতিভক্তি বা খারাপ খেলার কারণে  অতিভক্তি কোনোটাই ইসলামে কাম্য নয়। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক কিংবা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকদের মধ্যে নিজেদের সমর্থিত দল নিয়ে মারামারি, হানাহানি ও শত্রুতা তৈরির ঘটনা পত্র-পত্রিকা প্রায়ই চোখে পড়ে। মানুষকে শয়তানের এসব দুরভিসন্ধিমূলক ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে তাই মহান আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা করেছেন,‘নিশ্চয় শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সূরা: আল-মায়িদা, আয়াত: ৯১)

 এসব শর্তে খেলাধুলার বৈধতা দেওয়া হলেও বর্তমানে প্রচলিত খেলাধুলায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় না। এসব খেলার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি, নামাজেরর প্রতি অবহেলা, অন্য ধর্মের অনুসরণ, সময় ও অর্থের অপচয়, জুয়া-বাজিধরা, রঙখেলা, গ্যালারিতে উদ্দাম নৃত্য-গান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কী আঁকা ইত্যাদির বাহুল্য থাকে। তাই এসব খেলাধুলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।

কারণ, আধুনিক কালে খেলাধুলার নানা শাখা-প্রশাখার বিস্তৃতি ঘটেছে। খেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আনুষঙ্গিক বহু বিষয়। খেলার বৈধতা-অবৈধতার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিবেচ্য। যেমন এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব খেলার প্রাণ দর্শক-শ্রোতা। দর্শকরাই খেলাধুলার মাধ্যমে আয়ের প্রধান উৎস। দর্শক না এলে বিশ্বফুটবলের নিয়ন্ত্রক ফিফা কিংবা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি মাঠে মারা যাবে। এ দর্শকদের কারণেই খেলাধুলা নিয়ে মিডিয়া ও পুঁজিপতিদের যত আগ্রহ।

 গ্লোবাল ভিলেজের যুগে খেলাধুলায়ও গ্লোবালাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। শুধু তাই নয়, খেলা এখন সংস্কৃতি ও মানুষের চিন্তা-চেতনা পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো জনপ্রিয় খেলা সম্প্রচার করে কাঁড়ি-কাঁড়ি অর্থ আয় করছে। যে আয়ের ভাগ গিয়ে পড়ছে ওই খেলার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশের বোর্ড এবং প্রতিটি খেলোয়াড় পর্যায়ে।

 এ সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই ইসলাম খেলার বল্গাহীন স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। তবে সুস্থ্য সুন্দর ও শরীয়তের সীমায় থেকে খেলাধুলাকে উদ্বোধ্য করেছে ইসলাম।

 ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় ভাবে গণমাধ্যমঃগণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। গণমাধ্যম স্বাধীন হলে তার সুফল সবাই ভোগ করে। সে হিসেবে সাংবাদিকতা আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে। কথায় বলে, ‘যত বড় মাথা তত বড় ব্যাথা। ’ যে পেশার গুরুত্ব যত বেশি, এই প্রবাদ বাক্যের আলোকে সেই পেশার দায়বদ্ধতাও তত বেশি। বাংলাদেশের আপামর জনগণ এ দৃষ্টিকোণ থেকেই সাংবাদিকদের ভিন্ন চোখে মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে থাকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির তথা বিশ্ব মানব সম্প্রদায়ের কল্যাণে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম- এ ব্যাপারে ন্যূনতম সন্দেহ-সংশয় নেই।

যেহেতু গণমাধ্যমকে সমাজের দর্পণ বলা হয়, তাই গণমাধ্যমকর্মীদেরও দর্পণের মতো স্বচ্ছ হতে হয়। এটা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বিশেষ ভূষণও বটে। সাংবাদিকদের শুধু রাজনৈতিক সংবাদ সংগ্রহ করলে চলবে না। দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেমন আছেন, কী করছেন- সেসব বিষয়ের সংবাদও প্রকাশ করতে হবে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট না করা ও কারও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করে এমন বিষয়গুলো মাথায় রেখে সংবাদ লিখতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের কবিরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না? (কথাটি রাসূল (সা.) তিনবার বলেছেন) সাহাবায়ে কেরামরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! বলুন, তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, কথাগুলো বলার সময় রাসূল (সা.) হেলান দিয়ে বসেছিলেন, অতঃপর সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। কথাগুলো বারবার বলতেছিলেন। আমরা (সাহাবারা) মনে মনে বলতেছিলাম, হায়! যদি তিনি চুপ হতেন। ’ -বুখারি ও মুসলিম

সততা একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় গুণ। অসৎ লোককে কেউ বিশ্বাস করে না। অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলেও অসততার কারণে একজন সাংবাদিকের অর্জিত সব সম্মান ধুলায় মিশে যেতে পারে। সাংবাদিকতার পথ হচ্ছে লোভ ও প্রলোভনের পিচ্ছিল পথ। সেই প্রলোভনকে জয় করতে না পারলে কোনো সাংবাদিকের পক্ষে দেশ ও সমাজের জন্য দায়িত্ব পালন অর্থহীন। সে হিসেবে বলা যায়, সাংবাদিকদের হাতে কলম আছে বলেই তারা সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলতে পারেন না। এমনটি সুস্থ সাংবাদিকতার বিপরীত কাজ। এটা অন্যায়ও বটে। ক্ষেত্রবিশেষ দেখা যায়, অনেক সাংবাদিক মিথ্যা ও বানোয়াট খবর প্রচার করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যায়কে সমর্থন করছে। ইসলামী শরিয়ত এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেছে। নিষেধ করা হয়েছে কুপ্রবৃত্তির অনুসারী হওয়ার। ইসলাম বলেছে মানবকল্যাণের জন্য সত্য সংবাদ পৌঁছে দিতে। তাই সংবাদ সংগ্রহের সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। যেনতেন লোক থেকে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে সূরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে লিপ্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। ’ হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট, যা শুনবে তা যাচাই ছাড়া বর্ণনা করা। ’ -আবু দাউদ

সাংবাদিক হলেই যা ইচ্ছা তা লেখা যাবে না। এমন কিছু প্রচার করা যাবে না, যাতে মন্দ ছাড়া ভালো কিছু নেই। এ ছাড়া সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা রক্ষা করে সংবাদ পরিবেশনসহ অন্যের ক্রীড়নক হয়ে বা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সংবাদ পরিবশেন চলবে না। এমন কাজ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল : ৩৬

একজন সাংবাদিককে সংবাদ লিখতে হবে শতভাগ সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে। কেননা সাংবাদিক কারও পক্ষের নন। তিনি ন্যায়-ইনসাফ ও সত্যের পক্ষপাতী। সাংবাদিক বন্দী তার বিবেকের কাছে। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ইনসাফ কর। ’ -সূরা আনআম : ১৫২
সাংবাদিক সর্বদা সত্য ও সততার প্রতি একনিষ্ঠ থাকবেন, তিনি সব ধরনের নেতিবাচকতা এড়িয়ে ইতিবাচকতাকে অগ্রাধিকার দিবেন। খারাপ শব্দ ও খারাপ দৃশ্য এড়িয়ে মার্জিত শব্দ ও নির্দোষ চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট থাকবেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমার বান্দাদেরকে বল, তারা যেন এমন কথা বলে, যা অতি সুন্দর। ’ -সূরা বনি ইসরাঈল : ৫৩