কক্সবাজারে ৩ দিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন সমাপ্ত
বঙ্গোপসাগর তীরে দাঁড়িয়ে দেশের প্রথম 'জলবায়ু' শপথ নিলেন অপরাজেয় যোদ্ধারা

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার, ১১ ডিসেম্বর।। ডিসেম্বর ১১। বিকাল ৩টা। বঙ্গোপসাগর তীরে দরিয়ানগর সমুদ্র সৈকতে মনোরম ঝাউবন। জলবায়ু বিপর্যয়জনিত প্রলয়ের হাত থেকে ধরিত্রীকে বাঁচানোর প্রত্যয়ে এখানে জড়ো হয়েছেন দেশের কয়েক'শ জলবায়ুকর্মী, কক্সবাজার স্থানীয় প্রশাসন প্রতিনিধি, আদিবাসী সম্প্রদায়, জেলে সম্প্রদায়, কর্মজীবি নারী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কয়েক'শ মানুষ।
এমুহূর্তে মুন্নিবন্ধ ডান হাত বাড়িয়ে তারা প্রস্তুত। জলবায়ু ফোর্বস-খ্যাতিমান কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু সবার সামনে দাড়িয়ে এক হাতে এক টুকরো কাগজ। অন্য হাতে একটা মাইক্রোফোন মুখের সামনে ধরে হাতের কাগজটা লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে জোর গলায় থেমে তিনি সুস্পষ্ট উচ্চারণে তিনি পড়ে গেলেন, 'আমরা আন্তরিকভাবে শপথ করছি যে, দীর্ঘকাল ধরে পরিবেশ দূষণ পৃথিবীর মাটি, পানি, বাতাস, জগত ও জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে মানবজাতির জন্য যে বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করেছে, আমরা পৃথিবীর মানুষেরা সেই দুর্দেবের বিরুদ্ধে অপরাজিত যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাব।
আমরা আরও শপথ করছি যে, পরিবেশের সুস্থতার স্বার্থে পরিবেশ বান্ধব যানবাহনের ব্যবহার বাড়াতে চেষ্টা করব ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে সচেস্ট হব।
এরই পাশাপাশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ও জ্বালানি ব্যবহার করে, খাদ্যের অপচয় ও প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করে পৃথিবীকে দারিদ্র্য ও দূষণমুক্ত করার প্রয়াস পাব।
আমরা আরো শপথ করছি যে, পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রতি আমরা দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণ করব, আমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে প্রকৃতিকে সুস্থ রাখব এবং পৃথিবীর কার্বন কমিয়ে সুস্থ, সুনীল বাসযোগ্য ধরিত্রী।
সাগর-আকাশ-মাটির মিলনবিন্দুতে সমবেত মানুষগুলিও দৃঢ়কণ্ঠে শপথনামার প্রতিটি বাক্যের পুনরাবৃত্তি করলেন স্ব কন্ঠে, শপথের বাকাগুলো গেঁথে নিলেন হৃদয়ে।
দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সংস্কারক ও জলবায়ুকর্মী, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কলমে মাত্র চারটি বাক্যে রচিত এই জলবায়ু অঙ্গীকারনামা বাংলাদেশের ইতিহাসে অনুষ্ঠিত প্রথম 'জলবায়ু শপথ'।
অপরাজেয় জলবায়ু যোদ্ধাবাহিনীর অংশ হয়ে এ সময় আরে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের কালচারাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার শারলিনা হুসেন মরগান, রিভারাইন পিপল প্রতিষ্ঠাতা শেখ রোকন, ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০ স্বীকৃতিখ্যাত কার্টুনিস্ট মোরশেদ মিশু এবং হার্ভার্ড অর্থনীতিবিদ আমরিন বশির, আইপিডিবি প্রধান নির্বাহী মমিনুল ইসলাম, আবিষ্কার ফ্রন্টিয়ার ফান্ডের কান্ট্রি হেড নাজমুল করিম, স্থানীয় সরকারের জোষ্ঠ প্রকৌশলী মানস মন্ডল, পার্টনারশিপ কারেন্ট অ্যান্ড ইনকুলিক বাংলাদেশ কর্মকর্তা ফায়সাল বিন মজিদ, ক্রিয়েটিভ কনজারভেটিভ আলায়ান্স প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ারা সিজার রহমান, সিবিএম আয়ারল্যান্ড থেকে মাহবুব করিম এবং এশিয়ান ইউনিভানিটি ফর ওমেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ নাজিমসহ দেশের প্রায় সবগুলো শীর্ষ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
দক্ষিণ এশীয় পাঁচ দেশের উদ্যোগ ক্লাইমেট অ্যাকশন চ্যাম্পিয়নস নেটওয়ার্ক (সিএসিএন) এর সাউথ ক্লাইমেট কনক্লেব- বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উদ্যোগে জেনল্যাবের আয়োজনে জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন ভিত্তিক তিনদিন ব্যাপী সম্মেলনের বহুমাত্রিক কার্যক্রমে
সমাপনী ঘটল এই 'জলবায়ু
শপথ' গ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এর আগে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে সাইট ভিজিট হিসেবে রাস্তার পাড়া জেলেপল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা কিভাবে জলবায়ুর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখছেন সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিন সকালে হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বলরুমে সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নলেজ স্পেল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জলবায়ু কর্মী ও বক্তারা জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রতিরোধ, জলবায়ু অভিবাদন, জলবায়ু ও জেন্ডার সহ বিভিন্ন ইস্যুর সমাধানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীরা নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তির অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন।