গ্রামীণ লোকায়ত সংস্কৃতি ধূইয়া গান সংরক্ষণে প্রবীণদের সাথে নবীনদের প্রত্যয়

মো. নজরুল ইসলাম।। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।।আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ প্রবীণ। প্রবীণরাই এই দেশ সমাজ তথা পরিবারের জন্য এক সময় বিরাট অবদান রেখেছেন। ২০২১ সাল স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী অর্থাৎ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হবে। যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন এ দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন তাদেরও অনেকে আজ কম বেশী বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।
বার্ধক্যের স্বাদ সবাইকে গ্রহন করতে হবে জন্মিলে যেমন মৃত্যু অনিবার্য, তেমনী বেঁচে থাকলে প্রত্যেক মানুষকেই বার্ধ্যকের স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এ থেকে কোনো নিস্তার নাই। উল্লেখ্য জাতিসংঘের আহ্বানে ১৯৯১ সাল থেকে অক্টোবর মাসের ১ম দিনটিকে সারা বিশ্ব আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
প্রতিবছর দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। এবারের মূল প্রতিপাদ্য নির ছিলো-“মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রবীনদের স্মরণ পরম শ্রদ্ধা” এ বছর প্রবীণদের পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের বহুজা প্রবীণ সংঘের উদ্যোগে প্রবীনদের অতীতের স্মৃতি স্মরণ করেন তার মধ্যে ছিল আউশ ও আমন মৌসুমের ধান ক্ষেত নিরানি দেয়ার সময় যে গান গুলে মাঠে মাঠে কৃষকের কন্ঠে ভেসে আসতো সেই ধূইয়া গান। এই গান প্রবীণদের অতিতের স্মৃতি স্মরণ করে দেয়। কৃষকরা যখন দল বেঁধে ধান ক্ষেতে নিরানি দিত তখন যে গান গুলো ক্ষেতে গাওয়া হতো সেই গান হারিয়ে গিয়েছিল।
সেই গান পরিবেশন করতে গিয়ে মো, শাজাহান মিয়া (৭৫) তার একের পর এক গান মনে পড়তে থাকে। মো নাসির উদ্দিন(৭৭) বলেন আমরা কৃষকরা মিলে রাতে রাতে গান চর্চা করতাম অনেক রাত্রিতে বৈঠকি গান গাইতে হতো সেই গান গুলো দিন দিন কমে আসছে । মো: বাবর আলী (৭৮) বলেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি বারসিক আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনে আমাদের মনের খোরাক ও বিনোদন ফিরিয়ে আনছে। আমাদের দেখে আগামী দিনের নতুন প্রজন্ম বাংলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের মাঝে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াবে। সাংস্কৃতিক চর্চার মানুষ সকলে কে শ্রদ্ধা করতে জানে। ধূইয়া গানে সব থেকে প্রবীণ ব্যক্তি মো, নয়া মিয়া (৯২) বলেন আমি এখনো ভালো আছি। পরিবারের সকলকে প্রবীণদের সন্মান ও শ্রদ্ধা করলে প্রবীণদের শরীর ও মন ভালো থাকে। আব্দুল বারেক মিয়া (৭০) বলেন আমরা আজ প্রবীন দিবসে গানের চর্চা করে তা চালিয়ে যাবো। ধূইয়া গানের আসরে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জনাব শহিদুল ইসলাম(৭৫) , বানিয়াজুরী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব বিপ্লব কুমার সরকার ও বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী জনাব বিমল রায়। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নবীন-প্রবীণের মিলন ঘটে ও গ্রামের প্রবীণরা আজ প্রবীণ দিবস পালন করতে পারছে, বিনোদন করতে পারছে। দীর্ঘদিন যাবৎ কোভিড-১৯ মানুষের জীবন-জীবিকাকে প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত করে চলছে। করোনায় বিশ্বব্যাপি মহামারীতে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত প্রবীণ জনগোষ্ঠি। প্রবীনদের সেবায় নতুন মাত্রা যোগ করার কথা বলা হচ্ছে।