গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে প্রবাসীর মালামালসহ গাড়ি ছিনতাই

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে প্রবাসীর মালামালসহ গাড়ি ছিনতাই
ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরা প্রবাসীকে বহনকারী গাড়ি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে থামিয়ে ছিনতাই হওয়ার এক বছর পর গাড়ি উদ্ধার ও মামলার আসামিদের সনাক্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সংস্থাটি দীর্ঘ তদন্তের পরে জানতে পারে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকারীরা পেশাদার একটি ডাকাত চক্র। যারা নিজেদের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে ছিনতাই ও ডাকাতি করত। তদন্তে আসামিদের চিহ্নিত করতে গিয়ে পিবিআই জানতে পারে চক্রের দুই আসামি আরেকটি মামলায় গ্রেফতার  হয়ে কারাগারে আছে। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে শোন এরেস্ট দেখিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই।
কারাগার থেকে রিমান্ডে পিবিআইয়ের কাছে আসা আসামিরা হলো,মো. সোহাগ (২৮) ও মো. শরিফুল ইসলাম (৩৭)। তারা সাভার থানার আরেকটি মামলায় কারাগারে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার প্রবাসীর মালামাল ও তাকে বহনকারী গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত দুজনকে সনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মীর শাফিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাতে আশুলিয়া থানার জিরাবো এলাকায় বাইপাইল টু আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে একটি গাড়ি থেকে প্রবাসীকে বহনকারী গাড়িটিকে থামার সংকেত দেয়। পরবর্তীতে গাড়ি থামানোর পরে সংকেত দেওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে গাড়িসহ স্বর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। এমন কি গাড়িতে থাকা সবার হাত-পা বেধে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে যায়। এই ঘটনায় গাড়ি চালক ও রেন্ট এ কার ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক (৩৫) বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন থানা পুলিশ তদন্ত করলেও রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরে নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের বিশেষ তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
মামলায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি তল্লাশীর নামে গাড়ি থামিয়ে সবার হাত, পা, চোখ, মুখ বেঁধে গাড়ি চালক ও ব্যবসায়ী মো. আব্দুল মালেকের ২০ হাজার টাকা, মোবাইল এবং তার গাড়ির যাত্রী প্রবাসী মো. আমিনুল ইসলামের পকেটে থাকা ১২ হাজার টাকা ও তিন হাজার সৌদি রিয়াল, এক ভরি স্বর্ণসহ বিদেশ থেকে নিয়ে আসা সকল মালামাল ও তাদের বহনকারী গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আর সবাইকে হাত-পা বাধা অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়।
শাফিন মাহমুদ আর বলেন, মামলাটি তদন্তের এক পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি তদন্তাধীন মামলা আসামিরা অপর একটি মামলায় কারাগারে রয়েছে। পরবর্তীতে  কারাগারে থাকা সোহাগ ও শরিফুলকে আদালতের মাধ্যমে ‘শোন আরেস্ট’ করে দুই দিনের হেফাজতে আনা হয়। দুই দফায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামিরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এবং ছিনতাই হওয়া গাড়ি ও চক্রের অন্য সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ছিনতাই করে নেওয়া  প্রাইভেটকার গাড়ী ও কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার সোহাগ ও শরিফুল পেশাদার ছিনতাইকারী। দীর্ঘদিন ধরে তারা পুলিশ, ডিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয় ব্যবহার করে ছিনতাই করে আসছিলো। এমন কি মামলার বাদী আব্দুল মালেকের গাড়ি ছিনতাই করে নেওয়ার পরে সেই গাড়ি ব্যবহার করে গত এক বছর ধরে ছিনতাই করে আসছিলো। তবে কতটি অপরাধ ঘটিয়েছে সেটি জানতে চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে পিবিআই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্ত উপ পরিদর্শক (এসআই) সালেহ ইমরান জানান, আসামি সোহাগের বিরুদ্ধে সাভার আশুলিয়া ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। শরিফুলের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা রয়েছে। শরিফুলে এই মামলায় নিজের দায় স্বীকার করে  আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে।