ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বিপদ সংকেত ৭- চট্টগ্রামসহ ১৯ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বিপদ সংকেত ৭- চট্টগ্রামসহ ১৯ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ
ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ হাসানঃ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব জেলা এবং জেলাগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে। এতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টির বর্তমান গতি-প্রকৃতি বজায় থাকলে তা আগামীকাল মঙ্গলবার ভোরের দিকে বরিশাল বিভাগের তিনকোনা দ্বীপ ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। দেশটির আবহাওয়াবিদগণ মনে করেন, ঘূর্ণিবায়ুর চক্রটি বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং শক্তি বাড়িয়ে আজ সোমবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ অন্যান্য সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এর অংশ হিসেবে আজ প্রস্তুতি সভা করবে চসিক। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে চসিকের উদ্যোগে খোলা হতে পারে কন্ট্রোল রুম। তবে গতকাল নগরের উপকূলীয় এলাকাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম। এদিকে সিভিল সার্জন জেলার আওতাধীন স্বাস্থ্য বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে বাধ্যতামূলকভাবে কর্মস্থলে অবস্থান এবং মেডিকেল টিম গঠন করে প্রস্তুত রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এনডিসি তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের প্রস্তুত থাকার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ভলান্টিয়ারদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে আজ প্রস্তুতি সভা হতে পারে। সেখানে সমগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কঙবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ২৪ (আজ) থেকে ২৬ অক্টোবর উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হবে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনেক স্থানে আকস্মিক বন্যা এবং পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, মুন, খোয়াই, সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে এবং সময় বিশেষে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।