দাম্পত্য কলহ এড়াতে স্ত্রীর সহযোগিতায় প্রেমিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

দাম্পত্য কলহ এড়াতে স্ত্রীর সহযোগিতায় প্রেমিকাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা ।। মুন্সিগঞ্জে স্কুলছাত্রী জেসিকা মাহমুদ (১৬) ওরফে জেসি হত্যা মামলার প্রধান আসামি প্রেমিক বিজয় রহমানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
শনিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজধানীর ওয়ারী থেকে গ্রেফতার  করেছে র‌্যাব-৩ এর একটি দল।
র‌্যাব বলছে, গোপনে আবিদা নামে আরেক মেয়েকে বিয়ে করায় বাগড়া দেয় প্রেমিকা জেসি। সে আবিদার মোবাইলে প্রেম সম্পর্কিত কথোপকথনের স্ক্রিনশর্টসহ ম্যাসেজ পাঠায়। এতে আবিদা-বিজয়ের মধ্যে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। বিষয়টি মিমাংসা ও শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বাসার ছাদে ডেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় জেসিকে।
রোববার(৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের কোর্টগাঁও এলাকায় বন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৭। স্কুলছাত্রী জেসিকা হত্যার প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বজনরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ ঘটনায় র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জেসি হত্যার আসামি বিজয় রহমান (১৯) গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত বিজয় মুন্সিগঞ্জ সদরের আরিফুজ্জামান আরিফের ছেলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বিজয় প্রেমিকা জেসিকে শ্বাসরোধে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার  বিজয় ২০১৯ সালে একই স্কুলে পড়ুয়া অপর আসামি আদিবা আক্তারের সঙ্গে প্রেম সম্পর্কে জড়ায়। বিজয় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেসিকার সঙ্গেও প্রেম সম্পর্কে জড়ায়। উভয়ে প্রেমের মধ্যে বিজয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদিবাকে গোপনে বিবাহ করে।
আবিদাকে বিয়ের বিষয়টি জেসিকা মাহমুদ জেসি জানতে পেরে ক্ষেপে যায়। বিজয়ের সঙ্গে তার বিভিন্ন কথোপকথনের স্ক্রীনশর্ট আবিদার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে পাঠায়। 
এনিয়ে গ্রেফতার বিজয়-আদিবার মাঝে দাম্পত্য কলহ, কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়।
গ্রেফতার বিজয় জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মূলত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে স্ত্রী আদিবার সঙ্গে আলোচনা করে এবং ১ জানুয়ারি উভয়ে মিলে জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে ডেকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে।
পূর্ব-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন বিকেলে আদিবা জেসির সঙ্গে দেখা করে মিমাংসা করার জন্য জেসিকে বিজয়ের বাসার ছাদে নিয়ে আসে। সেখানে আবিদার উপস্থিতিতে বিজয়-জেসির মধ্যে বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বিজয়-আদিবা মিলে জেসির গলাটিপে ধরলে শ্বাসরোধে অজ্ঞান করে।
পরিস্থিতি বুঝে জেসি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েছে জ্ঞান হারিয়েছে মর্মে নাটক সাজাতের উদ্দেশ্যে আদিবা-বিজয় মিলে জেসিকে অজ্ঞান অবস্থায় ছাদ থেকে নামিয়ে এনে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে বাসার ভেতরে চলে আসে।
বিজয়ের চাচা রাস্তার পাশে জেসিকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করলে গ্রেফতার বিজয় এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসা থেকে নেমে আসে। 
একপর্যায়ে গ্রেফতার বিজয় এবং তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিমকে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান জেসি মৃত্যুবরণ করেছে। মৃত্যুর খবরে বিজয় ও আদিবা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। 
জেসির মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে ভাই জানতে পারে জেসিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তখন তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানায় গ্রেফতার বিজয় ও আদিবাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর ৪ জানুয়ারি আদিবাকে পুলিশ গ্রেফতার হয় এবং সে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে। 
জেসির পরিবারের সদস্যদের নিকট হতে জানা যায়, জেসিকা মাহমুদ জেসি (১৬) মুন্সিগঞ্জ সদরের সেলিম দেওয়ানের মেয়ে। দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। 
গ্রেফতার বিজয় মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সে জেসি হত্যার পর থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় তার বন্ধুর বাড়িতে ৪ দিন আত্মগোপনে থাকে।
সেখানে সে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পরবর্তীতে ফরিদপুরের একটি মাজারে ছদ্মবেশে ২২ দিন আত্মগোপনে থাকে। সেখান থেকে গ্রেফতার এড়াতে ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাসায় এসে আত্মগোপনে থাকে। গত রাতে সেখান থেকে গ্রেফতার হয় বিজয়।
হত্যার নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, জেসির সঙ্গে প্রেম সম্পর্কিত তথ্য, স্ক্রিনশর্ট পেয়ে স্ত্রী আবিদার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় বিজয়ের। বিষয়টি মিমাংসা ও উচিত শিক্ষা দিতেই স্ত্রীর যোগসাজশে বাসার ছাদে ডেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় জেসিকে। গ্রেফতার বিজয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।