প্রকৃতি বাঁচাতে কক্সবাজারের ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকারের 'নতুন যুদ্ধ'

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার, ১৭ অক্টোবর ।। প্রকৃতি বাঁচাতে ‘নতুন যুদ্ধ’ শুরু করেছেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আনোয়ার হোসেন সরকার। বনের গাছ নিধন ও পাচার রোধ, জবর দখল উচ্ছেদ, বনের জমি পুনরুদ্ধার এবং বালু ও পাহাড়ে মাটি খোকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানে ধরাশায়ী হয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।
ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য অন্যতম প্রধান হচ্ছে গাছ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য এই বৃক্ষকে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে।
বন, পরিবেশ ও প্রকৃতি বাঁচাতে ‘সামাজিক আন্দোলনে’ পরিণত করতে চাই জানিয়ে ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, “আসুন বৃক্ষকে বাচাই, পাহাড়, বন, বালু ও মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা 'নতুন যুদ্ধ' শুরু করি। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য, পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি।
এদিকে, বালু ও পাহাড় খেকোদের প্রতিরোধ ও বনভুমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানে বনবিভাগ হার্ডলাইনে রয়েছে। এতে নাখোশ বন ও পরিবেশ ধ্বংসকারী দুষ্কৃতকারী চক্র।
এসব অপরাধী চক্র একাট্টা হয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক অপপ্রচার করে তাকে বদলীর জন্য মোটা অংকের টাকা বিনিযোগ ও বিভিন্ন কৌশল অবলন্ব করছে বলে অভিযোগ রয়েছে । চক্রটি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমেও টাকা বিনিয়োগ করে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এরপেছনে কয়েকটি অসাধু চক্র, গডফাদারের পাশাপাশি বন বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তিও নেপথ্যে জড়িত রয়েছে বলে সুত্রে প্রকাশ।
বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার যোগদানের পর গত এক বছরে বনভূমি দখল উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে ৯০ টি। এক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অবৈধ দখলকৃত সংরক্ষিত বন উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৫৪০.১৭ একর বন ভুমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বনভুমিতে নতুন করে বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। অভিযানের পর বনভুমিতে নতুন কোন ঘরবাড়ি, স্থাপনা নির্মাণ কিংবা
জায়গা দখল হয়নি।
ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, দীর্ঘসময় ধরে সংরক্ষিত বনভূমি অবৈধ ভাবে দখল করে যারা ঘরবাড়ি, স্থাপনা তৈরি করেছে। জবরদখলকারীরা বনভুমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে। সকল বনভূমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে।
বন ও পরিবেশ বিরোধী ঘটনায় গত এক বছরে ২২৮টি পিওআর মামলা, ৬২ টি ইউডিআর মামলা, ১১ টি পুলিশ মামলা (এফআইআর) এবং বিভিন্ন ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে ১৪ টি।
সুত্রে আরও জানা গেছে, উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাঠ জব্দ করা হয়েছে ৫৭২২.১৮ ঘনফুট, জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়েছে ১৫৩৯.২৫ ঘনফুট, বল্লী গাছ ১১৭৭ টি, খুটি ১২৭৫ টি, বাশ ৩০০০ পিস। এসব অভিযানে আটক করা হয় ১১ জনকে। দায়েরকৃত মামলায় পলাতক আসামী করা হয় ৫৭৪ জনকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংঘবদ্ধ পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট সদস্যরা বনাঞ্চলের ভিতরে ছরা ও খালে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট উত্তোলনকৃত বালু মজুদ করে। ট্রাক ও ডাম্পার ভর্তি করে ওই বালু বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়।
বিভিন্ন খালে ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাহাড় খেকো সিন্ডিকেট অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে গত এক বছরে বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে ৬৪ টি ড্রেজার মেশিন জব্দ করেন। এসময় বিপুল পরিমাণ পাইপ ও ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৯ ঘন ফুট বালু জব্দ করা হয়। এছাড়াও বিশেষ অভিযানে
মাটি, বালু ও কাঠ পাচারে ব্যবহৃত
৬৭টি যান বাহন জব্দ করা হয়।
ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, এখন সরকারি পাহাড় কাটা ও খাল থেকে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। আগে দুবৃত্তরা
অনেক ভাবে বন ও প্রকৃতি ধ্বংস করেছে। এতে পরিবেশে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকারের একটা বিরাট ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি যখন জেনেছি এর দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। অতীতের মতো কক্সবাজারে পাহাড় কাটা, খাল থেকে বালু উত্তোলন এখন আর নেই, দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে তা প্রতিরোধ করা হয়েছে। পাহাড় ও বালু খেকোদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বনবিভাগের কয়েকজন বনকর্মীরা জানান, কর্মচারীদের পেশাগত উন্নয়নে শুদ্ধাচার নিয়ে সপ্তাহে সপ্তাহে ডিএফও আনোয়ার হোসেন সরকার বিশেষ আলোচনা করেন। পোষ্টিং বাণিজ্য নেই বললেই চলে। বনায়নে কোন ধরনের অনিয়ম যাতে না হয়, সেদিকে তিনি কড়া নজরদারী রেখেছেন। এতে করে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে সৃজিত বনায়নে দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে কক্সবাজার অঞ্চল। পুরো কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগে তিনিই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন।