প্রতারণাই পেশা, সচিবের মামলায় গ্রেফতার: উদ্ধার ২০ লক্ষ টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট।। কখনো বিদেশী এনজিও কর্মকর্তা,কখনো বিশাল ডিগ্রীধারী চিকিৎসক,প্রকৌশলী আবার কখনো তারা বড় ও প্রভাবশালী আমলা বা সরকারি কর্মকর্তা। এসব পরিচয় নিয়ে মানুষকে সহায়তা কিংবা যৌথ ব্যবসায় বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
প্রতারিতদের অভিযোগে গ্রেফতার ও হন৷ জামিনে বেড়িয়ে আবার লিপ্ত হন প্রতারণায়৷ দীর্ঘ ছাব্বিশ বছর ধরে পেশা হিসেবে প্রতারণা করে আসছে এমন চক্রের চার সদস্য পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
চলতি মাসেই এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত সচিব। অধিক লাভের আশায় তাদের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে চক্রটির নানা তালবাহানায় সাবেক এই সচিব প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন৷ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার অভিযান চালিয়ে গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্য গ্রেফতার হন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি ও কলাবাগানের বশিরউদ্দিন রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা প্রতারকরা হলেন, মো. হায়দার আলী (৬৪), মো. রেজাউল করিম (৩৭), মো. নাসির উদ্দিন (৪৯) এবং মো. আব্দুল কাদের (৫৬)। এসময় তাদের কাছে থাকা প্রতারণার বিশ লক্ষ তিন হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
প্রত্যেকবার নাটকীয় উপায়ে এই চক্রটি প্রতারণা করে থাকে। গ্রেফতারের আগে চক্রের এক সদস্য অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে প্রতারক চক্রের ১ জন ফোন করে নিজেকে বাংলাদেশ নেদারল্যান্ড রিসাইক্লিং পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দেয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে তাদের প্রকল্পে পরামর্শক পদে চাকুরির প্রস্তাব দেয়। চাকুরির বিষয়ে আলোচনা তাকে ডাকা হয় মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের চক্রটির অফিসে। সেখানে ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া মো. হায়দার আলীসহ অন্যান্যদের পরিচয় হয়। এসময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা শুরু করে। চক্রের একজন সদস্য নিজেকে ইমপোর্টারের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি অন্যান্য সদস্যদের জানান, তার একজন ভারতীয় বস ষোল কোটি টাকার চশমা, হাতঘড়ি, ক্যামেরা কিনবে। এসব পণ্য ইমপোর্ট করে ভারতীয় বসকে সরবরাহ করলে ত্রিশ পার্সেন্ট লাভ হবে। এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখাতে হবে কিন্তু সেটা পঁচাত্তর লক্ষ টাকার জন্য করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় চক্রের সদস্যরা সাবেক এই সচিবকে ব্যবসায় শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে রাজী না হলেও প্রতারকদের প্রলোভনের কারণে তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। এরপর পাঁচ লাখ টাকা দেন এবং প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানায় নমুনা সংগ্রহ করে ভারতীয় বসকে দেখানো হয়েছে এবং নমুনা পছন্দ করেছে।
কয়েকদিন পর ভুক্তভোগী প্রতারকদের অফিসে যান এবং দেখতে পান কথিত ভারতীয় বস তাদের শর্তের লাভের অংশ হিসেবে চার কোটি আশি লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। এবার চক্রটি ভুক্তভোগীকে জানায় তারা ইমপোর্টারকে চার কোটি আশি লাখ টাকা দিতে চাইলে ইমপোর্টার পুরো টাকা অর্থাৎ ষোল কোটি টাকা পরিশোধ না করলে মালামাল দিবেন না। এবার পন্যগুলো কেনার জন্য প্রতারকরা ভিকটিমকে আরো পঞ্চাশ লাখ টাকা দিতে বলেন। একপর্যায়ে ভিকটিম তাদের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই চক্রটি একইভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করে সাতাশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অফিস সাজিয়ে প্রতারণার কাজ করে। তাদের প্রধাণ টার্গেট অবসরপ্রাপ্ত সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং বয়োবৃদ্ধ লোক। এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অন্তত দশটি করে মামলা আছে বলেও জানানো হয়।
বার বার গ্রেফতার এবং জামিনে বেড়িয়ে একই কাজে লিপ্ত হয়। এই চক্রকে দমানো যাচ্ছে না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা গ্রেফতার করি তারা জামিনে বেড়িয় আবার আগের কাজে লিপ্ত হয়। এটা দুঃখজনক কিন্তু জামিনের বিষয়টা তো আমাদের হাতে না৷ তারপরোও এবার আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানাবো।
এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি প্রতারণা মামলা রুজু হয়েছে। আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আছে এবং প্রতারক চক্রের অন্যান্য পলাতক সদস্যদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে জানান এই ককর্মকর্তা।