পোশাক কারখানাগুলোকে ঠকিয়েছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো

পোশাক কারখানাগুলোকে ঠকিয়েছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো
ছবিঃ সংগৃহীত

এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।। বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলোকে ‘ঠকিয়েছে’ বিশ্বের বৃহত্তম বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো। তাদের পোশাক তৈরির জন্য উৎপাদন খরচের চেয়েও কম টাকা দিয়েছে। বিভিন্ন কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও পোশাক কারখানাগুলোকে করোনা মহামারির আগের দামই দিয়েছে অনেক কোম্পানি।

সোমবার (৯ই জানুয়ারি) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের এক হাজার পোশাক কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। দাতব্য সংস্থা ট্রান্সফর্ম ট্রেডের সহযোগিতায় এটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাজ্যের অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্কুল। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ওই সময়ে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ পোশাক কারখানা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২ দশমিক ৩০ পাউন্ড (প্রায় ২৯০ টাকা) দিতে হিমশিম খেয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, চার বা ততোধিক কারখানা থেকে পোশাক কেনে এমন বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশই ‘অন্যায় ক্রয় অনুশীলন’-এ জড়িত। বিবিসি জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির সাস্টেইনেবিলিটি অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সির অধ্যাপক মুহাম্মদ আজিজুল ইসলাম এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহামারির শুরু থেকে দুই বছর বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত বেতন দেওয়া হয়নি। প্রতি পাঁচ কারখানার মধ্যে একটি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিতে হিমশিম খেয়েছে। অথচ একই সময়ে অনেক ফ্যাশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশি শ্রম ব্যবহার করে মুনাফা বাড়িয়েছে। তিনি বলেছেন, ছোট ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় একাধিক কারখানা থেকে পোশাক কেনা বড় ব্র্যান্ডগুলোই ‘অন্যায্য ক্রয় অনুশীলন’-এ বেশি জড়িত বলে জানিয়েছেন সরবরাহকারীরা। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে পোশাক শিল্প থেকে। এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মহামারির আগে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে যত শ্রমিক ছিল, মহামারির পর তার মাত্র ৭৫ শতাংশ কাজ করছেন। অর্থাৎ, প্রায় নয় লাখ পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই বেড়ে উঠেছেন অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। প্রায় ১৭ বছর এ শহরের পোশাক শ্রমিকদের দৈনন্দিন জীবন খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে তার। এই গবেষক আশা করছেন, যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকরা তার গবেষণালব্ধ তথ্যকে গুরুত্ব দেবেন। তিনি বলেন, খুচরা বিক্রেতারা তাদের প্রতিবেদনে বলে থাকে, শ্রমিকদের প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ বিষয়ে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এই খাতে স্বচ্ছতা একটি বড় সমস্যা। সতর্কবার্তা : এই গবেষণা প্রতিবেদনকে বিশেষ সতর্কবার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ট্রান্সফর্ম ট্রেডের ফিওনা গুচ। তিনি বিবিসি’কে বলেছেন, ‘খুচরা বিক্রেতারা যখন অতীতে নির্ধারিত শর্ত লঙ্ঘন করে সরবরাহকারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রমিকরাই। ফিওনার কথায়, কোনো খুচরা বিক্রেতা যদি পূর্বনির্ধারিত অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় অথবা বিলম্ব করে, তখন সরবরাহকারীকে অন্য কোনো উপায়ে খরচ কমাতে হয় এবং প্রায়শই এটি তাদের কর্মীদের ওপর গিয়ে পড়ে। সরবরাহ শৃঙ্খলে সবচেয়ে কম শক্তিধর শ্রমিকরাই। তিনি বলেন, বিদ্যমান সুপারমার্কেট ওয়াচডগের মতো যুক্তরাজ্যের পোশাক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের একটি ফ্যাশন ওয়াচডগ প্রয়োজন।