বাঁকখালী নদীর প্যারাবন কেটে দুই একর জায়গা দখল : ঘটনাস্থল পরিদর্শনে প্রশাসন

বাঁকখালী নদীর প্যারাবন কেটে দুই একর জায়গা দখল : ঘটনাস্থল পরিদর্শনে প্রশাসন
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ২৩ জানুয়ারী।। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকার উত্তর প্রান্তে প্যারাবন ধ্বংস করে ২ একর ( ২'শ শতক) সরকারী জায়গা দখলে নিয়েছে বদরমোকাম এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন। 

তিনি শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বদরমোকাম এলাকার মৌলানা আতিকুল ইসলামের ছেলে। 
এই ঘটনার মাস-দেড়েক আগেও  কস্তুরাঘাটের মুখে ১ একর সরকারী জায়গা দখল করেছে এই জসিম। সেখানেও প্রচুর গাছ কেটে রাতারাতি মাটি ভরাট করে প্লট আকারে গন্ডা প্রতি ৭/৮ লাখ টাকা করে বিক্রি করে চলেছে। কিছুদিন পুর্বেও ওখানে ৬০ লাখ টাকার সরকারি জায়গা বিক্রি করছে কথিত যুবলীগ নেতা জসিম।
বাঁকখালী নদীর তীর দখলের ঘটনাস্থল সোমবার পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার ও রবিবার প্রায় ৪ একর জমির প্যারবন, কেওড়া ও বাইন গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা হিসেব করে দিনে ও রাতে অবৈধ দখলীয় জায়গাটিতে গাছ কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। 
এই প্যারাবন নিধনে রয়েছে যুবলীগ নেতা জসিমের পিএস ঘোনারপাড়া এলাকার লম্বা জাহেদ ও কস্তুরাঘাট এলাকার আমির হামজা মাঝির এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জন শ্রমিক। তারা দিনের বেলায় এসব গাছ কাটে এবং রাতের বেলায় জোয়ারের পানিতে এসব ভেসে দেয়। এসব কাজ নির্বিঘ্নে করতে যুবলীগ নেতা জসিমের হয়ে ২০/২৫ জন কর্মী রাত জেগে লাঠিসোটা নিয়ে পাহারা দেয়। নিয়মিত বেতন ছাড়াও
দখল সম্পন্ন হলে তাদের কিছু দখলীয় জায়গা দেবেন বলে আশ্বাস দেন যুবলীগ নেতা জসিম।

সুত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে জায়গা দখল-বেদখল নিয়ে জসিম ও কফিলের গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিরাজ করছে তুমুল উত্তেজনা। পরে এক আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যস্থতায় দফা-রফা হয়েছে। দখল শেষ হলে বৈঠকের মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসা হবে বলে জানা গেছে। যেকোন মুহুর্তে নদীর জমি দখল নিয়ে কপিল ও জসিম দুই ভাইয়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।

এদিকে, নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি তুলে রাতারাতি পুরো এলাকা ভরাট করা হচ্ছে কফিলের নেতৃত্বে। কফিল যুবলীগ নেতা জসিমের আপন ভাই।

অন্যদিকে, যুবলীগ নেতা জসিমের পাশে ১ একর জায়গায় প্যারাবন কেটে ভরাট করছে শ্রমিকদল নেতা আবদুল মালেক ইমন। তিনি সেখানে টিনসেট ঘরও তৈরি করেছেন।
তিনি জানান, এটি সরকারী জায়গা নয়। আমার জায়গাটি বৈধ ও রেজিষ্ট্রিকৃত । আমার নামীয় খতিয়ানও আছে। সরকার
কে খাজনা দিয়ে কিনেছি। আর যারা সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে, প্যারাবন ও বাইনগাছ কাটছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে তিনিও দাবী জানান।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন জানান, কস্তুরাঘাট এলাকার অধিকাংশ জায়গা আমাদের। এগুলো আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। দীর্ঘ দিন ধরে দখলে আছি। এসব জায়গা খতিয়ানভুক্ত এবং আরএস, বিএস খতিয়ানও আছে। এগুলো কোনভাবে সরকারী জায়গা বা খাস জায়গা হতে পারে না। চাইলে কাগজপত্র দেখাতে পারি। কেউ খাস জায়গা বললেতো আর মুখ বন্ধ রাখতে পারি না। 

প্যরাবন নিধন করে বাঁকখালী নদীর তীর দখলের ঘটনাস্থল সোমবার পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা। প্যারাবন কেটে সরকারী জায়গা অবৈধভাবে দখলকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে দখল উচ্ছেদ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন সদর ইউএনও।

এদিকে, মুল অভিযুক্ত কথিত যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও বিএনপি নেতা আবদুল মালেক ইমন লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এবং অবৈধ দখলীয় জায়গা দেওয়ার প্রলোভনে দেখিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত সাংবাদিককে ব্যবহার করে মুল ঘটনায় নিরীহ মানুষজনকে ফাঁসানোর চেস্টা চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরী। কারা এসব প্যারাবন ধ্বংস করে ভুমি দখলে নিয়েছে, তাদের তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।