ভূমিকম্প: বিয়ানীবাজারে সয়েলটেস্ট গুরুত্বহীন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ভাবনা নেই

ভূমিকম্প: বিয়ানীবাজারে সয়েলটেস্ট গুরুত্বহীন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ভাবনা নেই
ছবি: সংগৃহীত
আমিনুল হক দিলু,বিয়ানীবাজার: এমনিতেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেট তথা বিয়ানীবাজার। ফলে এখানে ভূমিকম্প নিয়ে রয়েছে আগে থেকেই আতঙ্ক। সাম্প্রতিক দফায় সেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তবে আতঙ্ক থাকলেও ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নেই তেমন কোনো প্রস্তুতি।
সম্প্রতি সংঘটিত ছোট ছোট ভূমিকম্পের কারণে বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বড় ভূমিকম্প হলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বিয়ানীবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলা ও প্রতিটি বহুতল ভবন ভূমিকম্প সহনীয় কী না তা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন সময় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখনও এসব ভবনে চলছে কার্যক্রম। এতে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক বলেন, পৌর এলাকায় বেশ কয়েকটি ভবন ঝুকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। আমরা এগুলো ভেঙ্গে ফেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলে দিবো। ভবন মালিকরা উদ্যোগ না নিলে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষ তা ভেঙ্গে দিব।
আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, বিয়ানীবাজার পৌরশহর উপজেলার অন্যান্য এলাকায় নিয়মিত নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা সয়েলটেস্ট’র কোন গুরুত্ব দিচ্ছেননা। পৌর এলাকার বাইরে যেসব বাসা-বাড়ি কিংবা মার্কট নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো তৈরীতে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কোন অনুমতির তোয়াক্কা করছেননা ভবন মালিকরা। এতে ওই ভবনটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় কিংবা ভূমিকম্প সহনীয় করে তৈরী করা হচ্ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখার কেউ নেই।
 
বিয়ানীবাজার উপজেলা এমনিতেই ছোট-ছোট টিলা-পাহাড়বেষ্টিত জনপদ। এসব টিলার উপর এখন দেদারছে তৈরী হচ্ছে নতুন ভবন। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক লোক যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করছেন। বাকীদের কাছে বিজ্ঞানসম্মত ভবন তৈরী বাড়তি ঝামেলা। আবার যারা সয়েল টেস্ট এর জন্য স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্টানগুলোকে দায়িত্ব দিচ্ছেন, তাদের পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়েও অন্ধকারে ভবন মালিকরা।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌর এলাকায় অন্তত: ১০টি ঝুকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। মালিকপক্ষ না ভাঙলে নিজেরাই ভবনগুলো ভেঙে দেবে বলে জানায় পৌর কর্তৃপক্ষ।যদিও তালিকা করার কাজও আর এগোয়নি।
সবচেয়ে উদ্বেগের অবস্থা হচ্ছে, সরকারি যে ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে এগুলোর বেশীরভাগ ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে অসন্তোষ আছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের। ব্যাপক দূর্নীতির কারণে নির্মতিব্য ভবনগুলো নতুন অবস্থায়ই ঝুকিপূর্ণ।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলায় পাঁচতলার উপরে ভবনের সংখ্যা প্রায় অর্ধশ’ত। এগুলো বেশীদিন আগে নির্মিত হয়নি।
বিয়ানীবাজার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো: আব্দুল মুকিত বলেন, ‘বহুতল ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কী না তা পরীক্ষা করে দেখা জরুরী। আমরা দ্রুতই সে উদ্যোগ নেবো।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভা এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করিয়ে এবং মাটির পরীক্ষা ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে উপজেলার বেশিরভাগ ভবন। এতে করে রিখটার স্কেলে সাত বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে অধিকাংশ ভবনই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এখানকার সব ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করা। এজন্য নতুন ভবন নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা করতে হবে। মাটির ধরণের উপর নির্ভর করে ভবনকে একতলা বা বহুতল করতে হবে। জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ভূমিকম্প প্রতিরোধী ডিজাইনে এবং মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে দালান তৈরি করতে হবে। আর পুরনো দুর্বল ভবনগুলোকে সংস্কার করে শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। সম্ভব না হলে ভেঙ্গে ফেলতে হবে। বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে কোন অবস্থাতেই ভবন নির্মাণ করা যাবে না।