ভ্রমনের টাকা জোগাড়ে ডাকাতির সময় নানাকে হত্যা,গ্রেফতার ৫

ভ্রমনের টাকা জোগাড়ে ডাকাতির সময় নানাকে হত্যা,গ্রেফতার ৫
ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা।। ঘুরতে যাওয়া জন্য টাকা প্রয়োজন। নানার কাছে আছে নগদ টাকা। সেই টাকা নেয়ার জন্য ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারই দুই নাতি নাতনি। পরিকল্পনায় যুক্ত হয় নাতনির ছেলেবন্ধুসহ কয়েকজন।
চেতনানাশক ইঞ্জেকশন দিয়ে অচেতন করে টাকা পয়সা নেয়ার পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে চকবাজার খাজে দেওয়ান রোডের ফার্স্ট লেনের ৬ তলা ভবনের দোতলায় ডাকাতির জন্য প্রবেশ করে। সত্তোর্ধ হাজী মনসুর আহম্মেদ তখন বাসায় একাই ছিলেন। বাকি সদস্যরা ছিলেন একটি বিয়ে অনুষ্ঠানে। 
বাসা ফাঁকা থাকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ১৭ নভেম্বর রাতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে হানা দেয় একদল তরুন। মনসুর আহম্মেদকে অচেতন করার জন্য ইঞ্জেকশন দিতে গেলে বাঁধা দেন। আর তখনই তাকে মারধর করে ডাকাতি করতে আসা তরুনরা। মারধরে মারা যান মনসুর আহম্মেদ। তরুনরা তার বাসা থেকে নিয়ে যায় ৯২ হাজার টাকা।
ঘটনার পর ১৯ নভেম্বর নিহতের ছেলে আসগার আহম্মেদ বাদি হয়ে চকবাজার থানায় দস্যুতাসহ হত্যার মামলা হয়।
এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মনসুর আহম্মেদ হত্যায় তার পরিবারের সদস্যরা জড়িত।
মঙ্গলবার রাতে বকশিবাজার, চাঁদপুর আর মুন্সিগঞ্জ থেকে মনসুর আহম্মেদের দুই নাতিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার  করে চকবাজার থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন, মনসুর আহম্মেদের মেয়ের দুই ছেলে মেয়ে আনিকা তাবাসসুম ও শাহাদাত মুবিন আলভী; তাবাসসুমের ছেলেবন্ধু রাজু ও রাজুর ভাই রায়হান এবং তাদের পরিচিত সাঈদ।
ঘটনার তদন্তে পরিবারের সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ। 
বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। এই সিরিঞ্জকে কেন্দ্র তদন্ত মোড় নেয়। শুরুতে আমরা
দস্যুতাসহ খুনের মামলা নিলেও পরবর্তিতে পরিবারের সদস্যদের পরিকল্পনায় খুনের প্রমাণ পাই।
তিনি বলেন, পরিকল্পনায় ভিকটিমের ছেলে মেয়ে জড়িত। নাতনি আনিক ন্যাশনার ডেন্টালে পড়ে। তিনি মূল পরিকল্পনাকারী, তার ভাই, তার ছেলেবন্ধু ও অন্যানা পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি করতে গিয়েছিল।
ঘুরতে যাওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই টাকা জোগাড় করতেই ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছেন বিপ্লব বিজয় তালুকদার।
তিনি বলেন, এক মাস আগে পরিকল্পনা হয়। বাসা ফাঁকা থাকার সুযোগ খুঁজছিল তারা। আর এই সুযোগটি আসে ১৭ নভেম্বর রাতে। পরিবারের সদস্যরা চাঁন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েতে অংশ নিতে যায়। আনিকাও সেখানে যায়। কমিউনিটি সেন্টার থেকে তদারকি করেন তিনি। আর বাড়ির আশপাশে থেকে আনিকার ছেলেবন্ধু রাজু ওয়াচার হিসেবে কাজ করে। ডাকাতি করতে বাসায় প্রবেশ করে আনিকার ভাই আলভী, রাজুর ভাই রায়হান এবং সাঈদ।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, এই তিনজন ভুক্তভোগীকে ইনঞ্জেকশন দেয়ার চেষ্টা করে। এতে বাঁধা দেন ভুক্তভোগী। আর তখনই রায়হান এবং সাঈদ মনসুর আহম্মেদকে মারধর করে ঘরে থাকা টাকা লুট করে নিয়ে যায়। টাকাগুলো খুঁজে বের করে দেয় আলভী।
যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, ৯২ হাজার টাকা লুট হয়। এখান থেকে ৬২ হাজার টাকা আনিকার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডাকাতি করা। আনিকা ও আলভী পরিবার থেকে হাতখরচ হিসেবে খুবই সামান্য টাকা পেত। ঘুরতে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন থেকে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ঘটনাক্রমে হত্যার শিকার হন মনসুর আহম্মেদ।
ভুক্তভোগী মনসুর আহম্মেদের স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের দুই সন্তান ডাকাতির পরিকল্পনায় জড়িত। 
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনায় আনিকা ও আলভী জড়িত থাকার বিষয়টি পরিবারের সদস্যরা বুৃঝতে পারলেও তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন, জড়িতদের ডিজিটাল ফরেনসিক, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতার  করা হয়েছে। কার কী দায় রয়েছে তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করেছেন পাঁচজন।