'র‍্যাপিড ক্যাশ' নেপথ্যে দুই চীনা নাগরিকের নেতৃত্বে ,টার্গেট তিন দেশের নাগরিক

'র‍্যাপিড ক্যাশ' নেপথ্যে দুই চীনা নাগরিকের নেতৃত্বে ,টার্গেট তিন দেশের নাগরিক
ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।। স্মার্ট ফোনের এপস 'র‍্যাপিড ক্যাশ'। এই এপসের মাধ্যমে অনলাইনে সহজে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। চক্রের মূলহোতা দুই চীনা নাগরিক। যারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিত। এপসের পাঁচ শো থেকে কয়েক হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হত। পরবর্তীতে উচ্চ সুদে সেই টাকা আদায় করা হত। টাকা দিতে স্বীকার করলে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ ও আপত্তিকর ছবি বিভিন্ন জনকে পাঠানোর হুমকি দিত। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
সম্প্রতি রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় এক ভুক্তভোগী চক্রের হাতে প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে মামলা তদন্তে চক্রটির সন্ধান পায় এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিউ)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কল সেন্টারটির পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করেছে এটিউ’র সাইবার ক্রাইম ইউং। তবে এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড দুই চীনা নাগরিককে পাওয়া যায় নি।
বুধবার ( ১৭ মে)  দুপুরে রাজধানীর বারিধারায় এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিউ)’র প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সাইবারক্রাইম উইং’র পুলিশ সুপার (এসপি) ফারহানা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ঋণ নেওয়ার জন্য অ্যাপটি মোবাইলে ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীর সমস্ত কন্টাক্ট নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়।চক্রটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করা মহিউদ্দিন মাহি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছে। সে ভালো চীনা ভাষা বলতে পারে। এই সুযোগে তারা এই প্রতারণাটি করে আসছিল। বাংলাদেশে বসে তারা প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের একই ভাবে লোন দিয়ে প্রতারণা করত। তারা মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করত।
ফারহানা ইয়াসমিন আরও জানান, সহজে লোন দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলত। এরপর মোবাইলের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার নামে ভোটার আইডি ও ছবি নিত। গ্রাহকরা এই কাজগুলো করার সময়ে চক্রটি কৌশলে মোবাইলের কল লিস্ট, গ্যালারির ছবি, ভিডিওসহ সকল তথ্য হাতিয়ে নিত। এরপর লোন দেওয়ার পরে উচ্চ সুদে আদায় শুরু করত। কেউ দিতে আপত্তি জানালেই তাকে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিত। এই অ্যাপটি বানিয়েছে চীনারা। তারা এটাকে এভাবেই বানিয়েছে যে ডাউনলোড করলেই সকল তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে আমরা দেখতে পাই একটি বাসার ভেতরে গোপনে তারা এ কাজ করছে। অফিসে কাজ করা তরুণ-তরুণীরা হিন্দি ও উর্দু ভাষায় ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলছে। ভারত ও পাকিস্তানে একই এপস ভিন্ন নামে লোন দিচ্ছে। একইভাবে তাদের সঙ্গেও লোন দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। ৫০০ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্র লোন দিয়েছে। এর বিপরিতে তারা ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আদায় করা হত। প্রতিটি কর্মীকে ১২-১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়। পাশাপাশি গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারলে বোনাস দেওয়া হত। এর মাধ্যমে কর্মীরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পেতো। আমরা ধারণা করছি এই চক্রের আরও এমন কল সেন্টা রয়েছে।
লোভের ফাঁদে সর্বশান্ত মানুষ:  
মূলত চক্রটি সহজে লোন দেওয়ার ফাঁদ দিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষ সহজে টাকা পাওয়ার জন্য তাদের ফাঁদে পা দিত। এরপর আর চাইলেও বের হতে পারত না। এমন কি বাড়ি-ঘর বিক্রি করে তাদের টাকা দিতে হত। চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করত। দেশে বিকাল ও নগদ ব্যবহার করত। ভারত ও পাকিস্থানেও একই ভাবে আদায় করত। তারা যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম ব্যবহার করত। তারা একটি নাম্বার ব্যবহার শেষে বন্ধ করে দিত। এমন কি কোনো গ্রাহককে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে নিজেরা ডিলেট করে দিত। কোনো আপত্তিকর তথ্য নিজেদের কমপিউটারে রাখত না। এই সকল ছবি বানানোর জন্য আলাদা আরেকটি দল রয়েছে। তারা দেওয়ার পরে সব ডিলিট করে দিত।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মাহি উচ্চ শিক্ষিত। সে চীনা ভাষায় অত্যান্ত দক্ষ। সে কিপ্ট কারেন্সি কয়েন ব্যবসা সম্পর্কে জানে। পাশাপাশি সে কথা অনেক পটু। কি ভাবে মানুষকে ভয় দেখাতে হবে। কি বললে টাকা আদায় করা যাবে সে সব জানে। এমন কি তার কর্মীদের ওপর প্রচন্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করত গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে। টাকা আদায় করতে না পারলে তাদের বের করে দিত।