সাঘাটায় আদম ব্যবসায়ী আসাদুলের খপ্পরে প্রবাসী মামুন নিখোঁজ সর্বশান্ত পরিবার! থানায় অভিযোগ

সাঘাটায় আদম ব্যবসায়ী আসাদুলের খপ্পরে প্রবাসী মামুন নিখোঁজ সর্বশান্ত পরিবার! থানায় অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত

আবু তাহের, স্টাফ রিপোর্টার ঃ গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রামের নরকু বেপারীর পুত্র প্রবাসী আসাদুলের খপ্পরে পরে একই গ্রামের মোঃ মফিজলের পুত্র প্রবাসী মামুন মিয়া নিখোঁজ। ভুক্তভোগী পরিবার বিচারের দাবিসহ প্রশাসনে হস্তক্ষেপে সন্ধান পেতে সাঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

নিখোঁজ প্রবাসী স্ত্রী'র থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার মুক্তি নগর ইউনিয়নের বেলতৈল গ্রামের প্রবাসী মামুন মিয়া একই গ্রামের আদম ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম ওরফে আসারু একজন আদম ব্যবসায়ী ও প্রতারক শ্রেণির লোক। আসাদুল দীর্ঘদিন যাবৎ ইরাক দেশে অবস্থান করায় তার দেশে থাকা স্ত্রী-সন্তানের মাধ্যমে মামুনকে ইরাক দেশে পাঠাইয়া উচ্চ বেতনে চাকুরীর ব্যবস্থা করিয়া দিবে মর্মে ফুসলাতে থাকে। একপর্যায়ে মামুন মিয়া তাদের প্রলোভনে বিদেশে যেতে রাজি হইলে, বিদেশে যাওয়ার আগে ৬ লক্ষ টাকা এবং বিদেশে যাওয়ার পর কাজ করিয়া ১ লক্ষ টাকা, সর্বমোট ৭ লক্ষ -টাকা বিদেশ যাওয়া বাবদ দিতে হইবে মর্মে প্রতারক আসাদুল ইসলাম ও তার পরিবার মামুনকে জানায়। মামুনের স্ত্রী শারমিন বেগম বলেন, বিদেশ যাওয়ার পূর্বে আমার স্বামী মামুন মিয়া গ্রামের বাড়ীতে মুদির দোকান করে সুন্দর জীবনযাপন করতাম আসাদুলের কথায় পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করার আশায় উক্ত টাকার বিনিময়ে ইরাক দেশে যেতে রাজি হয়। স্বামীর ইচ্ছা পূরণ ও ভবিষ্যতে সুখের কথা বিবেচনা করে আমার ব্যবহারের সমস্ত স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করাসহ স্থানীয় বেসরকারি এনজিও সংস্থা ও স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উক্ত টাকা সংগ্রহ করি। পরে, সে মোতাবেক স্থানীয় লোক মোকাবেলায় প্রবাসী আসাদুল ইসলামের কথামতো তার স্ত্রী পারভিন বেগম ও মেয়ে আফরিন আক্তার আমাদের নিকট হইতে একযোগে নগদ ৬ লক্ষ টাকা গ্রহন করে। টাকা নেয়ার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখ রাত্রী অনুমান ০৮:০০ ঘটিকার সময় প্রবাসী আসাদুলের নির্দেশে তার স্ত্রী, সন্তান আমার স্বামীকে ভিসা ও পাসপোর্ট নাম্বার A05469138 সহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি নিয়ে ইরাকে যাওয়ার জন্য তাদের বাড়ী হইতে ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। আমার স্বামীকে ইরাক দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকিলেও তাকে দুবাই নিয়ে গেলে আমার স্বামী মোবাইল ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করিয়া বিষয়টি জানতে পারি।

এমন দুঃখজনক ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমি ও আমার ২ ছেলে শ্বশুর-শাশুড়ীসহ পরিবারের সবাই তার চিন্তায় কান্নায় ভেঙে পরার এক পর্যায়ে দুবাই হইতে ১২ দিন পরে আসাদুল ইসলাম অজ্ঞাত নামা বিবাদীদের মাধ্যমে আমার স্বামীকে ইরান দেশে নিয়ে যায়। ইরান দেশে যাওয়ার কয়েকদিন পর আমার স্বামীকে জিম্মি করে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি স্বামীর প্রান বাঁচাতে তাদের কথায় আবারও একযোগে ১লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রবাসী আসাদুল এর স্ত্রী মোছাঃ পারভিন বেগমের এর হাতে প্রদান করি। এরপর হইতে আমার স্বামীর সাথে আমার কোন প্রকার যোগাযোগ না হওয়ায় আমি প্রবাসী আসাদুল ও তার পরিবারের সহিত নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ করে আমার স্বামীর খোঁজ খবর ও অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাই। তারা আমার স্বামী প্রবাসী মামুন মিয়ার কোন প্রকার খোঁজ খবর না দিয়া উল্টো আমার নিকট হইতে আরো ৩ লক্ষ টাকা দাবি করতে থাকে। আমি তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় একপর্যায়ে ০১ মাস পরে তারা জানায়, তোমার স্বামী মামুন মিয়া বিদেশে মারা গিয়াছে।

আমি তাদের কথা বিশ্বাস না করলেও আমার স্বামীর মৃতদেহ ও মৃতদেহের ছবি চাইলে আমাকে না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা সহ হুমকি ধামকী দিতে থাকে।

বর্তমানে আমি সর্বশান্ত হয়ে ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে সম্মানের ভয়ে স্বামীর ভিটে বাড়ী ছেড়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ীতে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এলাকার সচেতন মহল বলছে, প্রবাসী নিখোঁজ মামুনের মত আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত হচ্ছে শহর- গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার বিদেশগামী সাধারন বেকার যুবক। প্রতারক আদম ব্যবসায়ীদের কাছে এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এসব প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার সুশীল সমাজ।