সাংবাদিক পরিচয়ে সক্রিয় পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র, গ্রেফতার ০৩

সাংবাদিক পরিচয়ে সক্রিয় পেশাদার ছিনতাইকারী চক্র, গ্রেফতার ০৩
ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।।নুরুল আফছার নিজেকে পরিচয় দেন দৈনিক ভোরের চেতনার সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। কিন্তু পেশায় তিনি একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক ও মানবাধিকার পরিচয় ব্যবহার করে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছিল আফছার।
পুলিশ বলছে, সড়কে নিরাপদে পুলিশের চোখে ফাকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ছিনতাই ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ির সামনে সাংবাদিক লেখা কাগজ ও পত্রিকার নামে স্টিকার ব্যবহার করত।
গত ৩০ নভেম্বর একই কায়দায় রাজধানীর শেরে বাংলা নাগর থানার খেজুর বাগান এলাকা থেকে এক ভুক্তভোগীকে বিমানবন্দর নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে মারধর ও  বিদেশি মূদ্রাসহ কয়েক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় আফছার চক্রের সদস্যরা।
তথ্য প্রযুক্তি ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেফতার  করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নুরুল আফছার ও তার সহযোগী  আফজাল হোসেন এবং মো. মনিরুজ্জামান।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক। 
তিনি জানান, গত নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখ ভোর ৬টার দিকে বিমানবন্দরে যাওয়ার উদ্দেশ্য মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকার সংসদ সদস্যদের বাস ভবনের ৩ নম্বর ভবনের বাসিন্দা অলিউর রহমান তুষার (২৭) খেজুর বাগান ক্রসিং থেকে একটি প্রাইভেটকারে উঠে।
এ সময় প্রাইভেটকারে ড্রাইভারসহ মোট চার জন যাত্রী ছিলো। প্রাইভেটকারটি একটু সামনে গিয়ে সংসদ ভবনের ৬ নম্বরগেইটে মনিপুরিপাড়ার বিপরীতে যাওয়া মাত্রই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিরা ভুক্তভোগীর তুষারের চোখে কালো চশমা ও হাত বেধে ফেলে। এরপর একটি লাঠি দিয়ে মারধর করে।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর পকেটে থাকা ৫ হাজার ১০০ কাতারি মূদ্রা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ টাকা, নগদ টাকা ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। 
এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে ভুক্তভোগীকে কে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার থানার বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাশনাল পার্কের ফেলে দেয়। পরবর্তীতে গত ৬ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী তুষার বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলার (নং-০৬) দায়ের করেন।
মামলার পরবর্তীতে এই চক্রটিকে ধরতে শুরু হয় আরেক চ্যালেঞ্জ। ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও আরিচা মহাসড়কের প্রায় আড়াইশো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত গাড়ির অবস্থান সনাক্ত করা হয়। ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে নান্দনিক হাউজিং নামের একটি আবাসিক এলাকায় গাড়িটি পাওয়া যায়৷  পরবর্তীতে নান্দনিক হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়িটি জব্দ ও ছিনতাইয়ে জড়িত নুরুল আফছার ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার  করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই করা ২টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ১৭টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। 
এছাড়া প্রাইভেটকার এর ড্যাসবোর্ড এর সামনে দৈনিক ভোরের চেতনা নামক একটি পত্রিকা এবং সাদা কাগজে সাংবাদিক লেখা লেমেনিটিং করা একটি স্টীকার, ভিকটিমকে মারধর করার কাজে ব্যবহৃত লাঠি, কালো চশমা, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেয়াওয়া আইডি কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
ডিসি আজিমুল হক আরও জানান, গ্রেফতার  নুরুল আফছার নিজেকে দৈনিক ভোরের চেতনা নামক পত্রিকার একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। মূলত ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরন সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তারা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয়ের আইডি কার্ড, স্টীকার ইত্যাদি ব্যবহার করতো।
প্রাথমিকভাবে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, অপহরন, ছিনতাইসহ মোট সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ডিএমপি পুলিশের এই কর্মকর্তা।