সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা অধিকতর তদন্তে পিবিআইকে নির্দেশ

এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।। অফিশিয়াল সিক্রেটস আইনে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে রোজিনাকে অব্যাহতি দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। তাতে আপত্তি জানিয়ে বাদীর নারাজি আবেদনের শুনানি করে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন সোমবার (২৩শে জানুয়ারি) অধিকতর তদন্তের এই আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন জানান, মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী গত ১৫ জানুয়রি যে নারাজি আবেদন করেছিলেন, তার শুনানির দিন ছিল সোমবার। শুনানিতে বাদীর বক্তব্য শুনে তার নারাজি আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। পাশাপাশি মামলা তদন্ত করে পিবিআইকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক।
বাদীর আইনজীবী বদরুল ইসলাম নারাজি আবেদেনের পক্ষে শুনানি করেন। এর বিরোধিতা করেন রোজিনার আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বাদী শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট। ফৌজদারি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলাটির পুনঃতদন্ত বা অধিকতর তদন্ত হলে রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। রোজিনাকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ রেখে গত ১১ অক্টোবর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোর্শেদ আলম খান। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে তিনি আদালতকে জানান। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ২০২১ সালের ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের কক্ষে তাকে আটকে ফেলে কর্মচারীরা। তারা অভিযোগ করেন, ওই কক্ষ থেকে সরকারি নথি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন রোজিনা। কয়েক ঘণ্টা ওই কক্ষে আটকে রাখার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রোজিনা। পরে এই সাংবাদিক তাকে নির্যাতনের অভিযোগও করেছিলেন। সেই রাতে রোজিনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ থানায়। স্বাস্থ্য বিভাগ তখন ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে রোজিনার বিরুদ্ধে। তবে রোজিনা ওই সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর তার সহকর্মীরা বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের “অনিয়ম-দুর্নীতি” নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে “হয়রানি” করা হচ্ছে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় রোজিনাকে। দেশে-বিদেশে সাংবাদিকসহ অধিকারকর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ছয় দিন পর জামিনে মুক্তি পান রোজিনা।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম “সেরা অদম্য সাহসী” হিসেবে ২০২১ সালে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এছাড়া গত বছরের ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের “অ্যান্টি-করাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড”ও পান তিনি।