আমিনুল হক দিলু,বিয়ানীবাজার।।প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙাপুড়া পিঠার উপকরণ ঢলুবাশ বিয়ানীবাজার থেকে এখন বিলুপ্তপ্রায়। আগের মতো এখন আর উপজেলার গ্রামীণ এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না।
এক সময় বাজারে মাছের মেলা বসলে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদী থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) চুঙাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিলো এ অঞ্চলের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বর্তমানে সেই দিন আর নেই। চুঙাপুড়া পিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল সরবরাহও অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না বিন্নি ধান।
ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙাপুড়া পিঠা তৈরি করা যায় না। কেননা ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে এক ধরনের রস থাকায় আগুনে বাহিরদিক পুড়ে ও ভেতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়।
একসময় মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড়ে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। কিন্তু বনদস্যু ও ভূমিদস্যু এবং পাহার খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া।
তবে হারিয়ে যাওয়া এ ঢলুবাশ পৌষ-সংক্রান্তির সময় বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা যায়। গত প্রায় সপ্তাহখানেক থেকে পৌরশহরে ৩-৪জন বিক্রেতা ঢলু বাশ বিক্রি করছেন। কেউ আবার বাশের ভিতরের চালও বিক্রি করছেন।
পৌরশহরের দক্ষিণ বাজারে ঢলুবাঁশ নিতে আসা সুমন দেব ও প্রশান্ত পাল বলেন, সবসময় তো ঢলুবাঁশ পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো বাজারে উঠেছে। ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর পাওয়া যেত ঢলুবাঁশ। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ জানান, আগে কম বেশি সবার বাড়িতেই ঢলু বাঁশ ছিল।এখন সেই বাঁশ আগের মত নেই। এই বাঁশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙাপুড়ার ধুম লেগেই থাকত আমাদের অঞ্চলে। এখন সবই অতীত।
উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন পদকর বলেন, পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে তাদের বাড়িতে নানা অয়োজন হতো। এরমধ্যে চুঙ্গাপুঁড়ার অয়োজন ছিল বাধ্যতামূলক। এখনো সেই রীতি বহাল আছে। তবে চুঙ্গাপুঁড়ার উৎসবে ভাটা পড়েছে।