নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা।।ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের জমি দখল ও মাদক ব্যাবসার অভিযোগে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী জরিপ মিয়া ওরফে কালা জরিপ (৪০)কে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাপিড একশ্যান ব্যাটালিয়ন র্যাব।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় জরিপের তিন সহযোগী মো. আনিসুর রহমান (৩৮), মো. জাহিদ ওরফে বাবু মন্ডল(৪৫) ও ঝুমুর আক্তার (২৬)কে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, এক রাউন্ড গুলি), একটি টেজার গান, একটি এয়ার পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র
৫৮০ পিস ইয়াবা, চার বোতল বিদেশী মদ, একটি পাজেরো গাড়ি, সাতটি মোবাইল ফোন ও নগদ- এক লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, কালা জরিপ কেরানিগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় ডিস ব্যবসার আড়ালে সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করত। তার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির জমি জোরপূর্বক দখল ও লিখিয়ে নিত। এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার জরিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজি ও হত্যা মামলাসহ অন্তত ২২টি মামলা রয়েছে।
তিনি জানান, জরিপের সহযোগী আনিছুর রহমান একই এলাকার ওয়ার্কশপ রয়েছে। সে ব্যবসার আড়ালে জরিপের সঙ্গে মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রধান সহযোগি হিসেবে কাজ করত। তার বিরুদ্ধেও মাদক ও হত্যা দুইটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আরেক সহযোগী মো. জাবিদ ওরফে রহিম একই উপজেলার বসুন্ধারা রিভার ভিউ এলাকায় গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে জরিপের সহযোগী হিসেবে কাজ করত।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, হাসনাবাদ সুপার মার্কেটে তার টর্চার সেলে প্রায় সময় নারীদের নিয়ে ফুর্তিবাজি করতেন তিনি। সেখান থেকে অভিযানের সময ঝুমুর নামে এক নারীকে পাওয়া যায়। ঝুমুর প্রায় তাদের সঙ্গে ফুর্তিবাজি করতো।
জোড়পুর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে এমন কোনো ভুক্তভোগীকে পেয়েছেন কি না? জানতে চাইলে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, পতিতাবৃত্তি বাংলাদেশের আইনে অবৈধ। সেটা জোড় করে আনুক আর স্বেচ্ছায় বা পয়সার বিনিয়ম আনুক, সেটা অবৈধ। কোনো ব্যক্তি যদি বিবাহ বর্হিঃভুত কোনো নারীর সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করে তাহলে সেটি আইনের চোখে অপরাধ বটে।
জরিপের পেছনে ইন্ধন দাতা কে বা কারা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, র্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, জরিপ নিজেই একজন বড় সন্ত্রাসী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আসছিল। হাসনাবাদ সুপার মার্কেটটি তার কথিত সম্পত্তি। এটাও তিনি দখল করে রেখেছেন। তার একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। ওই বাহিনীতে ২২ জন সদস্যে যুক্ত থাকার তথ্য ও নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। যাদের দিযে জরিপ সব ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তথ্য অনুযায়ী জরিপের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২২ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে দায়ে করা মামলায় যারা স্বাক্ষী হিসেবে ছিলেন, প্রতিনিয়ত তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলো। মুলত সে এলাকায় ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে।
তার টর্চার সেলে আগে বিভিন্ন সময় একাধিক নারীকে নির্যাতন করার অভিযোগও রয়েছে। ইতিপূর্বে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বার গ্রেফতারও হয়েছিল। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মামলায় জামিন নিয়েছে। কিন্তু তার অপরাধ তৎপরতা কেউ থামাতে পারে নি।
তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি ন? জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে অপরাধী এটাই তার পরিচয়। তবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আমরা পাইনি।