পিরোজপুরে কলেজছাত্রী লামিয়া হত্যায় জড়িত স্বামী গ্রেফতার

পিরোজপুরে কলেজছাত্রী লামিয়া হত্যায় জড়িত স্বামী গ্রেফতার
ইনসেটে লামিয়া, গ্রেফতার হওয়া লামিয়ার স্বামী তরিকুল

পিরোজপুর প্রতিনিধি।। পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের কলেজ ছাত্রী লামিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং অভিযুক্ত  মূল  আসামি লামিয়ার স্বামী তরিকুলকে ১৬ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পরে তরিকুল তার অপরাধের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। 

পি বি আই  পরিদর্শক বায়েজিদ আকন জানায়, কলেজ  ছাত্রী লামিয়া আক্তার (১৮) হত্যার সাথে জড়িত তরিকুলকে ১৬ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া তরিকুলের বাবার নাম মিজান খান, সে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

এ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পিবি আই জানায়,গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করে পুলিশকে জানায়, ২০১৯ সনের শেষের দিকে ভিকটিম লামিয়ার সাথে তরিকুলের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন আসামী তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেনীর ছাত্র এবং লামিয়া ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সনে মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটি শেষে যেদিন বাড়ি থেকে আসামী ঢাকায় যাবে সেদিন ভিকটিম লামিয়া আসামীর বাড়িতে এসে ওঠে। ফেইসবুকে “তানিশা তানজিম” নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুটি নগ্নছবি ছড়িয়ে পরার কারণে লামিয়া আসামীকে দায়ী করায় এবং স্থানীয় লোকজনের চাপে ঐদিন সন্ধ্যায় আসামী তরিকুল ভিকটিম লামিয়াকে বিয়ে করে। উক্ত বিয়েতে আসামী তরিকুলের পিতা মাতার অসম্মতি ছিল।

তাদের বিবাহ মেনে না নেয়ায় বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়ীতেই থাকত। সেখানে আসামীর যাতায়াত ছিল। বিয়ের সাত মাস পর লামিয়াকে তার বাপের বাড়ী থেকে শশুর বাড়ীতে তুলে নিতে না চাইলে ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।

এরপর গত ০৬ নভেম্বর ২০২২ রাত অনুমান ১১.০০ টার সময় তরিকুল ভিকটিম লামিয়ার সাথে সঙ্গোপনে দেখা করে। সেসময় তরিকুল লামিয়ার বাপের বাড়ী যেয়ে ঘরের বাইরে থেকে লামিয়াকে ডাক দিলে লামিয়া ঘরের বাইরে এসে তরিকুলের সাথে দেখা করে এবং ঘরের পাশের কলপাড়ে বসে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলে। কথা বলার এক পর্যায়ে ভিকটিমের মা ও নানী বাইরে থেকে বাড়ীতে চলে আসে তখন লামিয়া বাড়ীর ভিতরে চলে যায়।

পরবর্তীতে লামিয়ার মা ও নানী ঘুমালে সে পুনরায় বাড়ী থেকে বের হয়ে তরিকুলের সাথে দেখা করে। তারা কথা বলার এক পর্যায়ে ভিকটিম রাগান্নিত হয়ে বলে, ছাড়াছাড়ি হলে সে তরিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করে দেবে। এরপর তারা হাটতে হাটতে হিমু খাঁর দোকানের কাছে যায়। রাত অনুমান ১২.০০ টার পর হিমু খাঁর দোকানে বসে কথাবার্তার একপর্যায়ে তরিকুল রাগে ভিকটিম লামিয়ার গলা টিপে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে টেনে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে বালু খুড়ে লাশ বালু চাপা দিয়ে বাড়ি চলে যায়।

ঘটনার ০৪ (চার) মাস পর গত ১১ মার্চ ২০২৩ তারিখ আসামী মানষিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়ে ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লভস কিনেন। তারপর রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোড়ার পর লাশের হাত দেখতে পেয়ে লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হাতটা গর্তে রেখে পুনরায় লাশ বালু চাপা দিয়ে আসে। পরদিন রাতে তরিকুল একটি চিরকুট লিখে লামিয়ার ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানী বাইরে বের হয়ে চিরকুট দেখতে পায়। তরিকুল তখন খালের অপর পাড়ে বসে ছিল। এরপর লামিয়ার পরিবারের লোকজন টর্চ লাইট মারলে সে দৌড়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করে।  ঐ রাতে কালিবাড়ির একটি বাগানে অবস্থান করে পরদিন ৩.০০ টায় আসামী তরিকুল ঢাকায় তার বাবার বাসায় চলে যায়।

উল্লেখ্য গ্রেফতারকৃত মোঃ তরিকুল ইসলাম কে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পিরোজপুর আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং সে নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।