মানিকগঞ্জের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় যুব সমাজের ভূমিকা

বিশ্ব ব্রমান্ডো সৃষ্টি লগ্ন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানব সৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাস বৃদ্বিজনিত কারণে জলবায়ুগত পবির্তন চরম আকার ধারণ করেছে এবং ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে বিধায় এই পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অতি কার্বন নি:সরণ। কার্বন নি:সরণ হয় মূলত গ্রীনহাউস প্রক্রিয়াকরণ,জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার,শিল্পকারখানার বর্জ্য,রাসায়নিক সার-কীটনাশক কৃষিব্যাবস্থাসহ বিভিন্ন যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকরণের কারণে। জলবায়ুগত পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে বন্যা,খড়া,ঝড়,অনাবৃষ্টি,সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সম্প্রতি মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনকেই দায়ী করা হচ্ছে। ১৮০০ সন পরবর্তী শিল্পায়নের বিস্তার লাভের মধ্যদিয়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রাসের নির্গমন পরিমাণ ক্রমেই বেড়েই চলেছে। আমরা জানি,পৃথিবীর চারপাশে ওজন গ্যাসের একটি স্তর রয়েছে এবং ওজোন স্তরে বিদ্যমান ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের সমন্বিত রুপ হচ্ছে ক্লোরোফ্লরো কার্বন (সিএফসি)। মূলত: রেফিজারেটর (ফ্রিজ) এবং তাপানুকুল যন্ত্র(এসি)তে ব্যবহারের জন্য ১৯৩০ সালে দশকে সিএফসি রাসায়নিকসমুহ বাণিজ্যিকভাবে ব্যাবহারের জন্য উদ্ভবিত হয় এবং ফ্রেয়ন নাম দিয়ে পণ্যে উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এবং পৃথিবীতে অতিরিক্ত ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (সিএফসি-র মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ফলে ওজোনস্তরে ছিদ্র তৈরী হচ্ছে। ফলে সূয্য রশ্মি মধ্যে ক্ষতিকারক অতিবেগুণী রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে প্রবেশ করছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পায়ন পূর্ব সময় থেকে অর্থ্যৎ আঠার শতক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বায়ুমন্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে ২৮০ থেকে ৩৭৯ পিপিএম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯০ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১ দমমিক ৪০ থেকে ৫ দশমিক ৮০ সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিশে^র প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। ৩০ বছরের মধ্যে হিমালয়ের বরফের পাঁচ ভাগের চারভাগই গলে যেতে পারে। এ সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে পারে ০ দশমিক ০৯ থেকে ০ দমমিক ৮৮ মিটার পর্যন্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশে^ ধানের উৎপাদন কমবে আট ভাগ ও গম কমবে ৩২ ভাগ। তাপমাত্রা দেড় থেকে আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে পথিবীর সমগ্র প্রাণবৈচিত্র্যের এক-তৃতীয়াংশ হুমকির মুখোমুখি হতে পারে বলে জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে। প্রতিবছর বিশে^ যে পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড নিগর্মণ হয় তার প্রায় ৮০ শতাংশই হয় শিল্পোন্নত দেশে। নাইট্রাস অক্সাইড এবং সিএফসি শিল্পোন্নত দেশেই বেশী নির্গমণ হয়। বাংলাদেশে মাথাপিছু কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাসের নির্গমন মাত্র ১৩৫ কেজি (১৯৯০), যেখানে জাপনে ২.২ টন, আমেরিকাতে ৫.৩ টন এবং সারা দুনিয়াতে গড়ে ১.২ টন। জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের ইন্টার গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ(আইপিসিসি) গঠন করা হয়। ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল আন্ত:সরকার জলবায়ু সংক্রান্ত প্যানেলের চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরই বিশ^বাসীর টনক নড়ে। বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও প্রভাব পড়বে কি না ত নিয়ে যারা সংশয়ে ছিলেন,তাঁদের কাছেও বিষয়টি গুরুত্ব পেতে শুরু করে। আইপিসিসির প্রতিবেদন অনুয়ায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পুরো পৃথিবী অত্যন্ত সুস্পটভাবে উষ্ণতর হচ্ছে। লাগামহীনভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হওয়ায় এই উষ্ণায়নের মূল কারণ। সুষ্ঠ ও সঠিক প্রশমন বা মোকাবিলা কৌশল না থাকায় আইপিসিসি ভবিষ্যদ্ববাণী করেছে যে, এই শতাব্দীর শেষে বিশে^র তাপমাত্রা ২ থেকে ৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে যার ফলশ্রুতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১৮ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশঃ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবে উন্নয়নশীর ও অনুন্নত দেশগুলো। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে সাগরের নৈকট্য,অধিক জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, হঠৎ বন্যা, ঘুর্নিঝড়, জলোচ্ছাস, আঞ্চলিক নদী প্রবাহ প্রণালী,মৌসুমী অতি বৃষ্টি ও শুস্ক মৌসুমে খড়া প্রভৃতি নিয়ামকের ভিত্তিতে প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন,আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৮৮ সেমি. বৃদ্ধি পেতে পারে। তাহলে দেশের উপকূলয়ী অঞ্চলসহ নদীবিধৌতি এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। বিশ^ জলবায় সংক্রান্ত ঝুঁকি ২০০৬ এর মূল্যায়ন অনুযায়ী ১০ টি দেশকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই তালিকায় বাংলাদেশ দ্বীতিয় স্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশকে নিয়ে সম্পদিত সাম্প্রতিকতম গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ২০৩০ ও ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সময়ের তুলনায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বাড়বে যথাক্রমে ১.০ ও ১.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস,যা ২১০০ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরো জানা গেছে, এদেশে শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমে যাবে, অথচ গ্রীস্মকালীন গরমের মাত্রা ক্রমশই বেড়ে যাবে। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের পরিমান এবং মাত্রারও পরিবর্তন হবে। ফলে দেশের বৈচিত্র্যময় ছয়টি ঋতুকেও আর আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে না। এই পরিবর্তনের ফলে দেশের বন্যা,আকস্মিক বন্যা,ভড়,সামুদিক জলোচ্ছাস,অতিবৃষ্টি,অনাবৃষ্টি ও লবণাক্ততা ইত্রাদির মাত্রা বেড়ে যাবে। উত্তরাঞ্চলে খড়া ও মরুপ্রবনতা দেখা দিবে এবং দক্ষিণাঞ্চলে ঝড় ও সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়বে। শুকনো মৌসুমে প্রধান প্রধান নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে। নদীর ক্ষীণ প্রবাহের কারনে সামুদ্রিক লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। সামুদ্রিক লোনা পানি অধিকতর উজানে প্রবেশ করায় কৃষিতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাদু পনির অভাব দেখা দিবে। এছাড়া মৎস সম্পদের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। উপকুলীয় অর্থনীতিতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে ও এলাকায় ব্যপক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন প্রতিকৃল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে দেশের সর্বত্র এবং সব মৌসুমে ফসলের ফলন কমবে। সবচেয়ে বেশি ফলন কমবে গমের,এরপর আউশ ধানের। আদ্র ও অধিকতর গরম আবহাওয়ার জন্য ফসলের খেতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যাবে। ভারী বর্ষনের ফরে নি¤œাঞ্চলে সৃষ্টি হবে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ভবদহ,তালা এখন অত্র এলাকার বড় সমস্যা। জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি। দু,একবছর কিছুটা পানি নিস্কাষণ হলেও পরে একই সমস্য আবার দেখা দেয়। মানিকগঞ্জের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সমস্যা: বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক দুর্য়োগে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য একপাক্ষিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই এই ক্ষয়ক্ষতির সাথে স্থানীয় প্রতিবেশগত পরিবর্তনের সম্পর্ক নিরুপন করা হচ্ছে না। আমাদের দেশে নানাভাবে নিজেরাই আমরা আমাদের পরিবেশকে প্রতিনিয়ত সংকটাপূর্ণ করছি। বাঁধ ভেঙে লবণ পানি ঢুকলেও তার দোষ ঢালাওয়াভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ বা রক্ষনাবেক্ষনের দুর্বলতাকে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে সামগ্রীক ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার নেয়ার জন্য কেউ থাকে না। ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে বাংলাদেশের ভিতরে মোট ৩০টি কৃসিপ্রতিবেশ অঞ্চল রয়েছে। এবং প্রতিটি কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই কোন একক পরিকল্পনা দ্বারা এই ৩০ টি কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলে সমানভাবে এবং একই সূচকের মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে না। মানিকগঞ্জ জেলার পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বহুবিধ সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যে নদীভরাট,শিল্প দুষন,নদি ভাঙ্গন,অপরিকল্পিত রাস্তা-বাধ ও সেতু নির্মান,আর্সেনিক সমস্যা অন্যতম। এই সকল সমস্যা প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় এলাকার প্রাণবৈচিত্র্যর উপর ক্রমবর্ধনশীল ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে এবং স্থানয়ি প্রাণবৈচিত্র প্রতিনিয়ত ভঙ্গুর পরিস্থিরি দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনা,যা স্থানীয় মানুষের অবিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান,চাহিদা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের জ্ঞনের সমন্বয়ে তৈরী হবে। পরিকল্পনায় শুধুমাত্র জলবায় পরিবর্তন নয় এরসাথে স্থানীয় প্রতিবেশগত পরিবর্তনের সম্পর্ক নিরুপন করে উদ্যোগ নিতে হবে। তারপরও নি¤েœ প্রধান কয়েকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো:- ক্স নদী ভরাট: আমাদের মানিকগঞ্জ জেলা একটি নদী বিধৌতি মধ্য সমতল প্লাবন ভূমি অঞ্চল। মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পদ্মা,যমুনা,ধলেশ^রী,ইছামতি,গাজীখালি,ক্ষিরাই,মন্দা,নুরানীগঙ্গা, কান্তাবতী,ভূবনেশ^র ও কালিগঙ্গা প্রভৃতি নদ নদীর মধ্যে বর্তমানে ধলেশ^রী,ক্ষিরাই,ভূবনেশ^র,নুরানীগঙ্গা ও মান্দা নদী নাব্যতা হারিয়ে সমতল ভূমিতে রুপান্তরিত হয়েছে এবং কিছু অংশে ক্ষীণ জলধারা জীবিত আছে। আশার কথা হলো মানিকগঞ্জে স্থানীয়ভাবে ধলেশ^রী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটি ও বেসরকারি সংগঠন বারসিক এর নানামুখী তৎতপরতায় বর্তমান সরকারের নদী শাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে গত বছর ধলেশ^রী নদীর একাংশ ৪৫ কি.মি খনন করা হয়েছে। অন্যন্য নদীগুলো খনন করে সারা বছর পানি প্রবাহের জন্য বেসরকরি সংগঠন বারসিক স্থানীয় সংগঠনের সাথে যৌথভাবে কর্মসুচি পালন করে আসছে। বর্তমানে স্থানীয় এসব নদীতে যতটুক পানি আছে তাও দুষিত। তাই ঐ পানির স্পর্শে শরীর চুলকায় ও ঘা হয়। গরু ছাগল গোসল করালেও গরুর শরীরে ঘা দেখা যায়। এই পানি পারিবারিক কোন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এরফলে শুস্ক মৌসুমে স্থানীয় এলাকায় পানির হাহাকার পরে যায়। অন্যদিকে স্থানীয় পুকুরগুলোতে বানিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করাতে সেখানে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার,মুরগীর বিষ্ঠা ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে এসকল পুকুরে গোসল করলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের খোসপাচড়াসহ নানা রোগ-ব্যধি দেখা দিচ্ছে। এছাড়া টিউবয়েলের পানিতে ক্ষতিকর আইরন আর্সেনিকতো আছেই। নদীতে পানি না থাকার কারনে এলাকায় কৃষক একখন্ড জমিতে বছরে তিনটি ফসল চাষ করতে পারছে না। পরিবর্তিত কৃষিপ্রতিবেশে স্থনীয় বহু সংখ্যক কৃষক ঐতিহ্যগত ফসল চাষের পরিবর্তে ভূট্রা,তামাক বা অন্যন্য অর্থকরী ফসলের চাষাবাদ করছে। দেশীয় জাতের বিন্নি ফসল আবাদ না হওয়ার ফলে এলাকায় গো-খাদ্য ও জ¦ালানী সংকট দেখা দিচ্ছে। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে পেশাগত পরিবর্তন ঘটছে। নদীতে পানি না থাকার ফলে শামুক,ঝিনুক এবং দেশী জাতের বিভিন্ন মাছ যেমন-কাউনিয়া,দেশী স্বরপুটি,এলাং,ফেশা,চিতল,বেতরাঙা,তাপসী,পাথরচুনা,কই,রয়না ইত্যাদি বিলুপ্তপ্ত প্রায়। হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন লোক সংস্কৃতি যেমন- নৌকা বাইচ,ভেউরা ভাসানো, গাজীর গান,গুরকুনাথের সিন্নী,গাওইলা সিন্নি ইত্যাদি। স্থানীয় মানুষের মতে,যমুনা সেতু তৈরী হওয়ার পর থেকে যমুনা সেতুর ভাটি অঞ্চলে চর জেগে ওঠায় এ অঞ্চলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশেষ করে আশির দশকের শুরুতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (ফ্যাপ) এর আওতায় ধলেশ্বরী মৃতপ্রায় হয়ে যায়।