মাম্পস রোগ আতঙ্ক : লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে রোগী

এস এম আওলাদ হোসেন, সিনিয়র রিপোর্টার।। লক্ষ্মীপুরে হঠাৎ করেই বেড়েছে ভাইরাসজনিত মাম্পস রোগ আতঙ্ক। একই সাথে বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে শিশু। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তবে হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মাম্পস ছোঁয়াছে রোগ হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে হাসপাতালটিতে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। জনবল সংকট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালটিতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে শিশু শয্যা রয়েছে মাত্র ১৫টি। অথচ প্রতিদিনই শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ভর্তি থাকে ৮০ থেকে ১০০ জন। এতে করে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও কর্তব্যরত সেবিকাদের। হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মেডিকেল অফিসারের ২২ পদের বিপরীতে রয়েছে ১৩ জন। গাইনী, নাক, কান, গলা, চক্ষু, প্যাথলজিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭টি কনসালটেন্ট পদ খালি দীর্ঘদিন থেকে। একইভাবে নার্স, আয়া, ব্রাদার, সুইপার, ঝাড়ুদার ও দারোয়ানসহ বিভিন্ন পদের সংখ্যা ১০৩টি। কিন্তু সেখানেও অর্ধেক লোক দিয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালটিতে শয্যা সংকট থাকায় একই বেডে ২ থেকে ৩ জন করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এরপরও সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হয় অনেককে। তবে তাদের অভিযোগ, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। টাকা না দিলে, মিলেনা সেবা, এমন অভিযোগও করেন কেউ কেউ। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শাহনাজ আক্তার অভিযোগ করে জানান, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা, বাজে দুর্গন্ধের কারণে ওয়াশ রুমে পর্যন্ত যাওয়া যায় না। এতে রোগীর পাশাপাশি বাচ্চার মায়েরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জহিরুল ইসলাম রনি জানান, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবল সংকট থাকার কারণে বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা রোগীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে তারা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (শিশু) চিকিৎসক ডা. মোরশেদ আলম হিরু জানান, গত ২০ দিনে ভাইরাস জনিত মাম্পস রোগে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে সহস্রাধিক শিশু। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জনিত মাম্পস রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বেড়েছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও। তবে মাম্পস রোগ ছোঁয়াচে হলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়ে হোম আইসোলেশনে থাকলে সেরে যায় এ রোগ।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা প্রদানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন আড়াইশ থেকে তিন’শ রোগী। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১১০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
এরপরও তারা সাধ্যমত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে মাম্পস রোগে আতঙ্কিত না হয়ে যথাযথ চিকিৎসা এবং ডাক্তারদের পরামর্শের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।