বাবার কাছে চিঠি

জাফর আলম।। প্রিয় আব্বু জানি তুমি এই চিঠ পড়তে পারছো না। যাদের বাবা বেঁচে আছেন,তাদের দায়িত্ব বাবাকে মাথার তাজ হিসাবে দেখা।আর যাদের বাবা বেঁচে নেই তাদের দায়িত্ব চোখের জ্বল দিয়ে বাবার স্মৃতিগুলো ধুয়ে নেয়া।বাবা জানি,আমার এই লেখা চিঠি তুমি পড়তে পারছো না।
কেমন আছ তুমি,জানতে খুব ইচ্ছে করে? বড্ডই মিস করি তোমাকে বাবা।কতনা কষ্ট করেছ আমাদের জন্য।বিনিময়ে কিছুই দিতে পারিনি।
আব্বুর খুব বেশী আদরের ছেলে ছিলাম।আদর করে আমায় পুতু বলে ডাকত।একদিন হঠাৎ আমার মোবাইলে আব্বুর কল,সালাম দিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলাম।ভাল বলে,আব্বু আমাকে বলে,পুতু আমার কথা নাকি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না?তখন আমি কক্সবাজার আমার পত্রিকা অফিসে ছিলাম।আর একমুহুর্ত দেরী না করে সোজা বাড়ী শামলাপুরে চলে আসলাম।বাজারে এসে গাড়ী থেকে নেমে আব্বুকে কল দিয়ে কিছু খাবে কিনা জিজ্ঞেস করলাম।খাবেনা বললে,আমি তারপরও আপেল কমলা নিই।পরদিন আব্বুকে ডাঃ দেখাতে নিয়ে যায়,ডাঃ পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ঔষুধ দেয়,কয়েকদিন ভাল দেখা যায়।পরে আব্বুর অবস্হা অবনতি দেখা দিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই।মেডিকেলে আব্বু প্রথমে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহাব উদ্দীনের তত্ত্বাবধানে ছিল।একদিন ডাঃ শাহাব উদ্দীন আমাকে তার রুমে ডেকে আব্বুর ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে বলে।শুনে আমার মাথায় যেন আসমান এসে পড়ল,চোখ থেকে টপটপ পানি পড়তেছে,ডাঃ আমাকে শান্তনা দেয়, বলে আপনার আব্বু ভাল হয়ে যাবে।আমি আব্বুর পাশ্বে এসে যখন আমার কপালটা আব্বুর কপালে রাখি,আমার চোখের পানি গুলো যখন আব্বুর কপালে পড়ে আমাকে বলে কাঁদিসনা।আমার কিছু হয়নি আমি শীঘ্রই ভাল হয়ে যাব।পরে আমি আম্মুকে আব্বুর ক্যান্সার হয়েছে কথাটা বলি।পরদিন ডাঃ আব্বুকে ক্যান্সার বিভাগে রেফার করে।একইদিন ক্যান্সার বিভাগ রেডিও থেরাপির জন্য ঢাকা ক্যান্সার হাসপাতালে রেফার করে।আমি আম্মু কয়েকদিন পর আব্বুকে নিয়ে ঢাকা যায়,এবং ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করে নয়টি রেডিও থেরাপি দিই।এরপর ডাঃ আব্বুকে আবার চট্টগ্রাম মেডিকেলে রেফার করে।দুইদিনপর চট্টগ্রাম মেডিকেলে আব্বুকে আবার ক্যান্সার বিভাগে ভর্তি করাই।সাতদিন চিকিৎসা দেয়,পরে ডাঃ আব্বুকে বাড়ীতে নিয়ে আসতে বলে।চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে আসার ঠিক পনের দিন, দিনটি ছিল শনিবার সকাল বেলা আব্বু আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।বলে পুতু হয়ত আমি আর বাঁচবনা, আমার হায়াত হয়ত শেষ।তখন আমি কান্নাকাটি করলে আব্বু আমাকে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে মহান আল্লাহকে স্বরণ করতে বলে।
তেইশ এপ্রিল ২০১৬ ইং দুইটা তিন মিনিটের সময় আমাদের সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়, আমার আব্বু আলহাজ্ব ফজলুল করিম।আব্বু অনেক না বলা কথা রয়ে গেছে।একদিন দু,দিন, সপ্তাহ, বছর পেরিয়ে চারটি বছর চলে গেলো গত ২৩ এপ্রিল।হয়ত এভাবে চলে যাবে যুগের পর যুগ।কিন্তু শেষ না হওয়া কথা রয়ে যাবে মনের অগোচরে।